গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর দুই নিতম্ব এবং পায়ের তলা পুড়িয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার হোমনায় মাদ্রাসার মুহতামিমের (প্রধান) বিরুদ্ধে। আহত ওই শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলার নয়াকান্দি মমতাজিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর উপজেলার চান্দেরচর গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় মা হাফেজা বেগম মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম হাবিব, সহযোগী শিক্ষক আতিকুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা করেন। মূল অভিযুক্ত মুহতামিম ও আসামি তিন শিক্ষার্থী পালিয়ে গেছেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষক আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
২৮ বছর বয়সী ওই মুহতামিম একই উপজেলার নয়াকন্দি গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে। গ্রেপ্তার শিক্ষক আতিকুল ইসলাম মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার শ্রীকাইল গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির এক বিশেষ সভায় মঙ্গলবার মুহতামিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, ‘দেখে মনে হয়েছে, ১০-১২ দিন আগেই পুড়েছে। দুই নিতম্বেই পুড়ে গিয়ে গভীর ঘাঁ হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
নির্যাতিত শিশু আবদুল কাইয়ুম জানায়, ওইদিন সে তার অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাচ্ছলে দুষ্টুমি করছিল। এক ফাঁকে তার পরণের লুঙ্গি খুলে যায়। এর শাস্তি হিসেবে ওইদিন (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মুতামিম তাকে অফিসে নিয়ে শিক্ষক আতিকুল এবং তিন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় তার নিতম্ব এবং পায়ের তলায় গরম ইস্ত্রি লাগিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে ঝলসে দেন।
ভুক্তভোগীর মা হাফেজা বেগম বলেন, ‘খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে সে আমাকে দেখে কাঁদতে থাকে। ছেলের মানসিক অবস্থা বুঝে তাক বাড়ি নিয়ে আসি। বাড়িতে এসে সে তার জখমের জায়গা দেখিয়ে পুরো ঘটনা বলে। তারা আমার ছেলের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে।’
এ বিষয়ে ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, ‘সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। ছেলেটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।’
হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আবদুল কাইয়ুমকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে পোড়ার ঘটনায় মুহতামিম হাফেজ সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক আতিকুল ইসলামহ আরও তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মা হাফেজা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’