চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও দৈনিক প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহর ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার রাতে গঠিত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ জানান, মোশাররফ শাহ-এর ওপর বর্বরোচিত হামলা, সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান তুষারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছাদিকুর রহমান সাগরকে আহত করার পৃথক তিনটি ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শহীদ আবদুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দানেশ মিয়াকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর ড. মো. আহসানুল কবীর পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটিতে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট ড. শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ ও শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রকিবা নবীকে সদস্য রাখা হয়েছে।
সংবাদ প্রকাশের কারণে রোববার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে দ্বিতীয় কলা অনুষদের সামনে হামলার শিকার হন মোশাররফ শাহ।
মোশাররফের ভাষ্যমতে, মারধরকারীরা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী ও সিএফসি গ্রুপের কর্মী।
তিনি বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে তিনি উপাচার্যের কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম বক্তব্য নেয়ার জন্য। এ সময় দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রলীগের কর্মী আমাকে আটকায়। আমাকে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে। আমার মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে সেখান থেকে রব হলে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফা মারধর করে।’
তিনি আরও বলেন, “মারধরের সময় নেতা–কর্মীরা পরবর্তীতে আর ছাত্রলীগ নিয়ে প্রতিবেদন না ছাপানোর হুমকি দেন। তারা বলেন, 'আর নিউজ করিস, তারপর দেখব তোরে কে বাঁচাতে আসে। ছাত্রলীগকে নিয়ে কোনো নিউজ হবে না।”
এ বিষয়ে সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমি এ ঘটনা শুনেছি। খোঁজ খবর নিচ্ছি৷ যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘আমি ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র গিয়েছি। তাকে চিকিৎসা জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাংবাদিকের ওপর চবি ছাত্রলীগের হামলা এ প্রথম নয়। গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে চায়ের দোকানে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে চবিসাস সদস্য ও ঢাকা স্টেটের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদকে মারধর করেন চবি শাখা ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, উপদপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জুন অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বহিষ্কার হওয়ার পরও ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পাসে কর্মরত দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে হেনস্থা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনা কেন্দ্র থেকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মারুফ ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়।