‘তালেবানি কালচার নিয়ে নিজে খুব গৌরবান্বিত’ বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এখানে (বিশ্ববিদ্যালয়) ওপেন কালচার ছিল। ছেলেমেয়েরা যা খুশি তাই করতে পারত; কেউ কিছু বলতে পারত না, কারণ তাদের বয়স ১৮ বছর। কিন্তু আমি বলেছি- সাড়ে ১০টার মধ্যে হলে ঢুকতে হবে। এ কারণে তারা (শিক্ষার্থী) এটার নাম দিয়েছে তালেবানি কালচার। এটা যদি তালেবানি কালচার হয়, তাহলে আমি এই কালচার নিয়ে খুবই গৌরবান্বিত, এটা নিয়েই আমি থাকতে চাই। আমি ওপেন কালচার চাই না।’
বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটরিয়ামে আয়োজিত তথ্য অধিকারবিষয়ক এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলমগীর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী উপাচার্য মো. কবির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ আমিনা পারভীন ও ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘আপনারা চান কি না, আমি জানি না। আমি চাই না, আমার ছেলেমেয়েরা, সন্তানেরা...ঘুরে বেড়াক। তাদের বাবা-মায়েরা সারা রাত ঘুরে বেড়ানোর জন্য পাঠাননি। বাবা–মায়েরা কিন্তু উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন, টেনশনে থাকেন- আমার মেয়ে কোথায় আছে, ছেলে কোথায় আছে। সেজন্য তাদের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। আমরা তাদের গার্ডিয়ান, আমরা তাদের হেফাজতকারী। আমরা কিন্তু ওই জিনিসটা অ্যালাউ করব না, কোনোভাবেই করব না।’
সেমিনারে মূল আলোচকের বক্তব্য দেন ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের উপপরিচালক মো. আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘দেশকে পরিবর্তন করতে হলে, দেশের টেকসই উন্নয়ন করতে হলে নিজেদের ভূমিকা রাখতে হবে।’
শাবির ভূয়সী প্রশংসা করে ড. আলমগীর বলেন, ‘নিজেদের কীভাবে পরিবর্তন করতে হয়, দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে হয়, তা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়ে দিয়েছে। কারণ গত বছর ইউজিসির মূল্যায়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৩৬তম, কিন্তু এ বছর তারা ইউজিসির সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। তাই আমি বলব, আমাদের যে রিসোর্স আছে তা কাজে লাগিয়ে দেশের পরিবর্তনে কাজ করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি শিক্ষকের পিএইচডি ফেলোশিপ থাকা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের গবেষক হিসেবে তৈরি করতে হবে। অনেকে বলবে, আমাদের দেশ থেকে শিক্ষার্থী বিদেশে পিএইচডি করতে চলে যাচ্ছে, আমার কীভাবে তাদের ধরে রাখব? এজন্য পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তাই দেশের সম্পদ কেমন আছে না আছে, সেটার ওপর জোর না দিয়ে নিজেদের কাজ ও দায়িত্বকে সঠিকভাবে পালন করতে হবে, তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।’
তথ্য মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমাদের দেশে তথ্য অধিকার আইন পাস হয়। এটি দেশের জন্য অনেক গুরুত্ব বয়ে নিয়ে এসেছে। তথ্য অধিকার বাস্তবায়নের ফলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে থাকে। আশা করি, এ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গুণগত কাজের জন্য অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’