মেসে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের হাতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবপ্রবি) এক ছাত্রীর র্যাগিংয়ের ঘটনায় একজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ঘটনা খতিয়ে দেখতে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপপরিচালক ফারুক হোসেনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রোকাইয়া। আর ভুক্তভোগী ইতিহাস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের সভাপত্বিতে তার কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম. মোস্তফা কামাল খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে. এম. সালাহ উদ্দীনসহ ছাত্র উপদেষ্টা, সহকারী ছাত্র উপদেষ্টারা, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর, সহকারী প্রক্টররা ও সকল বিভাগের সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ওই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। একইসঙ্গে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিকে আগামী ৫ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের পরপরই এক জরুরি সভা হয়। সেখানে প্রাথমিকভাবে একজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি রয়েছে। তাদের ঘটনা তদন্ত করে ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী বাকি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ৫ তলা বিশিষ্ট রব্বেজ টাওয়ারে অনেক ছাত্রী ভাড়া থাকেন। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে প্রথম বর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিজেদের রুমে ডেকেন নেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। এসময় ভুক্তভোগী নিজেকে অসুস্থ দাবি করে যেতে রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ছাত্রীনিবাসের ছাদে নিয়ে গিয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্নভাবে র্যাগিং করেন। এক সময় তিনি গুরুত্ব অসুস্থ হলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
র্যাগিংয়ের বর্ণনা দিয়ে নারাজ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিমু রানী তালুকদার বলেন, ‘আমার মতো এরকম ঘটনার শিকার যেন কেউ না হয়। আমার এই ঘটনা আমার পরিবার বা অন্য কেউ না জানুক, সেজন্য বলতে চাচ্ছি না। আমি সিনিয়র আপুদের অনেক নিষেধ করার পরও তারা আমার কথা শোনেননি। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছেন ওই ছাত্রীনিবাসের মালিক আবুল কালাম আজাদ।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রাতে ১০ জন জুনিয়র শিক্ষার্থীকে সিনিয়র কিছু শিক্ষার্থী ওপরে ডেকে নিয়েছিল। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকজন আসছিল। সে একটু অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল আর কি।’
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরপরই আমি খোঁজখবর নিয়েছি এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। বিষয়টি অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা করেছে। এজন্য আমি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারি না। এ বিষয়ে আমি প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাকে জানিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমিও শুনেছি। ওই শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল, তা জেনে পরে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’