মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পতনঊষারে আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলাবিশিষ্ট নতুন ভবনের কাজ প্রায় ৫ বছরেও শেষ হয়নি। কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ মাস সময় বেঁধে দিলেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩ বছরের চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। তবে আংশিক কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বন্ধ রয়েছে ভবন নির্মাণকাজ।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে কাজ শেষ করার জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বারবার ধরণা দিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফলে চরম অস্বস্তিতে পুরাতন ভবনে চলছে পাঠদান।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৮ সালে আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়টি ‘৩০০০ স্কুল এ’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। ২ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৫১ টাকা ব্যায়ে ৪ তালাবিশিষ্ট ভবনের কাজ শেষ করার জন্য ১৮ মাস সময় নির্ধারণ করে ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়।
২০১৯-২০ দুই বছরে দুইতলা পর্যন্ত আংশিক কাজ করা হলেও বর্তমানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার যোগাযোগ করেও কাজে কোনো অগ্রগতি আনতে পারছে না। ফলে পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় পাঠদানে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
দুই তলা পর্যন্ত কাজের পর এভাবেই পড়ে আছে ভবনটি। ছবি: নিউজবাংলা
সরেজমিনে দেখা যায়, চার তলাবিশিষ্ট ভবনের দুইতলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই করা হয়েছে। তিনতলার ছাদ ঢালাইয়ের জন্য বাঁশ লাগানো হয়েছে। এরপর থেকে কাজ বন্ধ। স্কুলের পুরাতন আধপাকা ঘরে চলছে ক্লাস।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, শ্রেণিকক্ষ সংকট নিয়ে ছোট ছোট রুমে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। তাদের দাবি, ‘এসব রুমে ক্লাস করতে ইচ্ছা করে না। নতুন ভবনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হোক। আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ছিল নতুন ভবনে ক্লাস করবে, কিন্তু কয়েক ব্যাচ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চলে গেলেও ভবন এখনও নির্মাণ হয়নি।’
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মিছবাউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমরা একটি ভবন পেয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। কেন বন্ধ রাখা হয়েছে তা আমরা জানি না। অবকাঠামো সংকট নিয়ে অনেক কষ্ট পাঠদান চলছে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল আহাদ বলেন, ‘বিগত তিন বছর ধরে আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার যোগাযোগ করেও কাজ হচ্ছে না। অবকাঠামো সংকট থাকায় বহুবার আবেদন করে একটি ভবন পেয়েছিলাম। ভবনের কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার চিঠিও দিয়েছি। আমাদের বিদ্যালয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হোক।’
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, ‘কাজ শুরু করার কিছুদিন পর করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ওই সময় কাজ বন্ধ রাখা হয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর রট-সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেশি বেড়ে যায়। ফলে, আর কাজ করানো হয়নি। জিনিসপত্রের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলে আবার কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আরেফিন খান জানান, দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ দেখিয়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করেছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’
খুব শিগগিরই আবার কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে যদি কাজ শুরু না হয়, তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা হবে।’