বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নওগাঁয় বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে টানাটানি

  •    
  • ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২৩:৫২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি, স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিরা তাদের পছন্দের জায়গা নির্বাচন করে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তাদের মধ্যে সমঝোতা না হলে সরকার স্থানীয় প্রশাসন অথবা আমাকে স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, খাদ্যদ্রব্য সব বিবেচনায় নিয়ে স্থান নির্বাচন করা উচিত।’

নওগাঁবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে জেলার এক জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর চার বছর পর ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত বিলের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিল-২০২৩’ পাস হয়। এর পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নওগাঁ শহরের পার্শ্ববর্তী দিঘলীর বিল, নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়ার বিল, মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা (চৌমাশিয়া বাজার) এবং বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন চারটি স্থান প্রাথমিকভাবে আলোচনায় আসে। তবে শহরের খুব কাছাকাছি নয়, আবার শহর থেকে খুব দূরেও নয় এমন স্থান নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয় সে সময়।

সে হিসেবে দিঘলীর বিলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে নওগাঁ শহরের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। আর ছাতড়ার বিল সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকা। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ততোটা উন্নত না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়বেন। তবে কোথায় হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়’, তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি নওগাঁর নওহাটায় (চৌমাশিয়া বাজার) স্থাপনের দাবিতে শোভাযাত্রা হয়েছে। সম্প্রতি নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া বাজারে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ‘হেল্প লাইন, হ্যালো নওগাঁ’ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

যৌক্তিক স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে বুধবার নওগাঁয় মানববন্ধন করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

উপজেলার নওহাটা মোড়ে স্থানীয় সচেতন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দুই শতাধিক মানুষ এই আয়োজনে অংশ নেয়। পরে তারা শোভাযাত্রা বের করে।

এ ছাড়া নওগাঁ শহরের আশপাশে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ঠিকানা শেষ পর্যন্ত ঠিক কোথায় হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে টানাটানি।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা মোড় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন যৌক্তিক স্থান মনে করেন বলিহার ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু নাছের।

তিনি বলেন, ‘চৌমাশিয়া বাজারটি শহরের খুব কাছাকাছি নয়, আবার শহর থেকে খুব দূরেও নয়। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে। নওহাটা মোড়ের ওপর দিয়ে বিভাগীয় শহর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ নওগাঁর সাতটি উপজেলায় যাওয়া যায়।

‘পার্শ্ববর্তী সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধা হবে। নওহাটা বাজারের পাশে প্রায় ৩০০ একর খাস জমি আছে। এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলে সরকারের রাজস্ব খাত থেকে জমি অধিগ্রহণের খরচ অনেকাংশেই কমে যাবে।’

সবশেষ যৌক্তিক স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। বুধবার দুপুরে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে ‘মুভমেন্ট ফর ডেভলপমেন্ট অফ নওগাঁ’র উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে মুভমেন্ট ফর ডেভলপমেন্ট অফ নওগাঁর আহ্বায়ক শফিকুর রহমান মামুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধা, খণ্ডকালীন আয়ের উৎস, শিক্ষার পরিবেশ ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকবে, এমন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন। কিন্তু একটি মহল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের স্বার্থে জেলা শহরের বাইরে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের চেষ্টা করছে। শিক্ষার জন্য সেখানে উপযুক্ত জায়গা নয়।

‘ছাত্রদের সুবিধার কথা তাদের মাথায় নেই। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে তারা জমি কিনে ব্যবসা করবেন। অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। এর ব্যত্যয় হলে কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না। শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আমরা জেলা শহরের খুব কাছেই যৌক্তিক স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় চাই। এটাই আমাদের প্রাণের দাবি।’

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, ‘অষ্টম শতাব্দীর পর একবিংশ শতাব্দীতে আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় পেতে যাচ্ছি, যা আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এই জেলার ছেলে-মেয়েরা বাইরের জেলায় গিয়ে পড়াশোনা করাটা সত্যিই কষ্টকর ছিল। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে জেলাবাসীর জন্য সুবিধা হবে।

‘এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা যাবে। কৃষিপ্রধান এই জেলা ধান, আম ও সবজির জেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব নিয়ে গবেষণা করা হলে আর্থ-সামাজিক দিক দিয়েও উত্তরের এই জনপদ এগিয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সভ্যতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাবে। আমাদের আরও বেশি মানোন্নয়ন হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিসীম প্রয়োজন আছে, যা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অনেক পরে হলেও তা হচ্ছে। তবে এমন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় হোক যাতে করে সবার জন্যই সুবিধা হয়।’

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে এখনও নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে ইউজিসির কমিটি গঠনের মাধ্যমে পরিত্যক্ত অথবা এক ফসলি জমি নির্ধারণ করা হবে। নওগাঁবাসীর সার্বিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও গবেষণার উপযোগী পরিবেশসহ সার্বিক বিষয় দেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি, নওগাঁর স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিরা তাদের পছন্দের জায়গা নির্বাচন করে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তাদের মাঝে স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতা না হলে সরকার স্থানীয় প্রশাসন অথবা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, খাদ্যদ্রব্য সব বিবেচনায় নিয়ে স্থান নির্বাচন করা উচিত বলে মনে করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর