হল কক্ষের সিনিয়রদের মাদক সেবন ও উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে উৎপাতের ঘটনার ভিডিও করে তা প্রকাশের জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শেখ রাসেল হলের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। কক্ষ ছাড়া করতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তার বন্ধুদের ডেকে এনে মারধর ও হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলটির ৮১৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী মাহিবি রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (৫০তম ব্যাচ) ও শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন- ৪৮ ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের প্রীতম সাহা ও প্রকাশ মিত্র, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের মাহবুব রহমান উৎসব, নৃবিজ্ঞান বিভাগের মির্জা তৌফিক রায়হান এবং ৪৯ ব্যাচের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান পরশ।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অভিযুক্ত প্রীতম সাহা, মুশফিকুর রহমান ওরফে পরশ এবং মাহবুব রহমান ওরফে উৎসব ও মির্জা তৌফিক রায়হান মাহিবিকে রুমে ডেকে নিয়ে আসেন। রুমে ঢুকেই ভুক্তভোগী মাহিবি রহমানকে সজোরে দুটি থাপ্পড় মারেন পরশ। এর ঠিক পরই উৎসব ভুক্তভোগীকে পরিবার তুলে গালি দিয়ে আবারও সজোরে থাপ্পড় মারেন। এমনকি এ ঘটনার বিষয়ে প্রভোস্টকে কোনো অভিযোগ করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার হুমকি দেন তারা।
এর আগেও এ বছরের ৩০ জানুয়ারি ১৫-২০ জনকে নিয়ে এসে মাহিবিকে রুম ছেড়ে দেয়ার জন্য তারা হুমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি চালু হয় নবনির্মিত শেখ রাসেল হল। প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর সময় নামের পাশে কক্ষ নম্বর উল্লেখ করে বরাদ্দ দেয়া হয় এবং নিজ নামীয় বরাদ্দকৃত কক্ষে ওঠার জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে প্রীতম ও প্রকাশের ৭২২ ও ১০২৪ নম্বর কক্ষে বরাদ্দ থাকলেও একসঙ্গে থাকার সুবিধার্থে নিজ বিভাগের দুই জুনিয়র শিক্ষার্থীকে বের করে তারা ৮১৬ নম্বর কক্ষে এসে ওঠেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহিবি রহমান বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্ট থাকলেও তার ধূমপান ও উচ্চস্বরে গান বাজায়। আমরা প্রতিবাদ করলেও কর্ণপাত করে না। তাদের খারাপ ব্যবহার ও হুমকির জন্য আমরা সবসসময় মানসিক যন্ত্রণায় থাকি। আমাদের পরীক্ষার আগের দিন তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধু-বান্ধব ডেকে এনে সাউন্ডবক্সে গান বাজায় ও বিরক্ত করে। তাই সেদিন আমাকে ভিডিও বন্ধ করতে বললেও আমি শুনিনি। ফলে তারা অন্য বন্ধুদের ডেকে এনে আমাকে মারধর করে।’
তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মুশফিকুর রহমান পরশ বলেন, ‘একসঙ্গে খেলাধুলা করার কারণে প্রীতম ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। গতকাল রাতে ভাই যখন জানালেন, ওই জুনিয়র রুমমেট তার কথা শুনছে না, তখন আমরা গিয়ে তাকে সতর্ক করেছি ও বুঝিয়েছি। এসময় তার গায়ে হাত তোলার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
অভিযোগের বিষয়ে প্রীতম সাহা বলেন, ‘মাহিবি জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তার আচরণে যথেষ্ট সমস্যা ছিল। আমরা রুমে ধুমপান করি সত্য, তবে অন্য মাদক সেবন করি না। তাকে জোরে ভিডিও ছাড়তে নিষেধ করেছি। সে না শোনায় আমার বন্ধুরা তাকে উচ্চস্বরে ধমক দিয়েছে। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট ড. তাজউদ্দিন শিকদার বলেন, ‘সোমবার রাতেই তারা আমাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। আজ তাদের লিখিত অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি ওয়ার্ডেন ও হলের কর্মকর্তাদের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। মারধরের ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব।