বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তালপাতার পাঠশালা: নানা সমস্যা মাথায় নিয়ে ১৮ বছরের পথচলা

  •    
  • ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৯:০৫

পাঠশালাটিতে সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতাসহ রয়েছে নানা সমস্যা। সমস্যাগুলো সমাধানে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।

একটা সময় ছিল যখন দোয়াতের কালি আর তালপাতায় শিক্ষা জীবন শুরু করত শিশুরা। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে সেই ব্যবস্থা। তবে নতুন করে সেই শিক্ষা ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বাগেরহাটের চিতলমারীর ‘শিশু শিক্ষা নিকেতন’ নামের একটি পাঠশালা।

দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চলতে থাকা এ পাঠশালা থেকেই শিক্ষা জীবন শুরু করছে অসংখ্য কোমলমতি শিশু।

সরোজমিনে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রতন্ত গ্রাম দক্ষিণ ডুমুরিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামে ১৮ বছর ধরে ‘শিশু শিক্ষা নিকেতন’ নামের একটি পাঠশালা চালাচ্ছেন ৭৫ বছর বয়েসী পণ্ডিত কালীপদ বাছাড় নামের এক বৃদ্ধ। স্থানীয়দের সহায়তায় চলা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা মিলল দোয়াত-কালি আর তালপাতার। এখানকার শিশুরা দোয়াতের কালি আর বাঁশের কঞ্চির কলম দিয়ে তালপাতায় লিখে শুরু করছে তাদের শিক্ষা জীবন। বর্তমান প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প মনে হলেও পাঠশালায় অন্তত অর্ধশত শিশু তালপাতায় অক্ষর জ্ঞান চর্চার দেখা মিলে।

পাঠশালার শিক্ষক পণ্ডিত কালীপদ বাছাড় বলেন, ‘তালপাতায় অক্ষর চর্চায় হাতের লেখা ভালো হয়। এই পাঠশালা থেকে শিশুরা প্রথম অক্ষর জ্ঞান লাভ করে। তারা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, বানান, যুক্তাক্ষর, শতকিয়া, নামতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে এখান থেকে। এই পাঠশালা থেকে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।’

তবে পাঠশালাটিতে সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতাসহ রয়েছে নানা সমস্যা। সমস্যাগুলো সমাধানে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।

স্থানীয় অভিভাবক লক্ষ্মী রানী বলেন, ‘আমাদের পাঠশালার শিক্ষক কালীপদ বাছাড় শিশুদের খুব ভালো পড়ান। তিনি হাতে ধরে শিশুদের তালপাতার লেখা শেখান। এ কারণে আশপাশের প্রায় ৫টি গ্রামের ৫০টি শিশু এই পাঠশালায় পড়াশোনা করে। ভালো পড়াশোনার কারণে আমারাও আগ্রহ নিয়ে শিশুদের এই পাঠশালায় ভর্তি করি।’

তিনি জানান, প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য মাসে মাত্র ১৫০ টাকা নেন শিক্ষক কালীপদ বাছাড়। যা দিয়ে তালপাতা ও দোয়াত কালি পাঠশালাটির বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করা হয়।

আরেক অভিভাবক শীল্পা রানী মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের এই পাঠশালাটি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে প্রচণ্ড গরমে খুব কষ্ট হয় শিশুদের। এছাড়া কোনো খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। দুপুরে নদীতে জোয়ার এলে পাঠশালার মাঠটি পানিতে তলিয়ে যায়, তখন কাদাপানি পার হয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যেতে হয়। আমরা অভিভাবকরা জলাবদ্ধতাসহ পাঠশালাটির সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ভজন মণ্ডল ও নিলয় ঢালী বলেন, ‘স্থানীয়দের সহায়তায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের এই পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। বর্তমানে পাঠশালাটিতে বিদ্যুৎ না থাকা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে আমরা পাঠশালাটি দেখাশোনার পাশাপাশি সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঐতিহ্যবাহী এই পাঠশালাটির সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, ‘চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া নামের একটি পাঠশালা রয়েছে। পাঠশালাটিতে এখনও সেই পুরাতন আমলের তালপাতার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যেটা আমাদের পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিহাস-ঐতিহ্য কথা মনে করিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি পাঠশালাটিতে বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতা বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুতই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর