বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অনিয়মিত, ঢাবির ছাত্রকে হলছাড়া করার অভিযোগ

  • প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়    
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৩:৫৪

স্নাতকোত্তরের ছাত্র এনামুল হাসান নোমান বলেন, ‘জুনিয়র সিটে থাকবে আর আমি ফ্লোরিং করব, এটা তো সম্ভব না। আমি তো মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। আর এই বয়সে এসে নিয়মিত প্রোগ্রাম করাও তো সম্ভব না। প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হলে একটা কথা ছিল। পরে আমি বাধ্য হয়েই হল ছেড়ে দিই।’

কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ না নেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রের সিট কেড়ে নিয়ে অন্য একজনকে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

সেই ছাত্র গত বুধবার রাতে হল ছাড়েন। বর্তমানে তিনি আজিমপুর এলাকায় একটি মেসে থাকছেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম মাইনুল ইসলাম অনিক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি তথ্যবিজ্ঞান ও লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে তার ছাত্রত্ব নেই।

অনিক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী বলে ক্যম্পাসে পরিচিত।

অন্যদিকে অভিযোগকারী এনামুল হাসান নোমান রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এ আবাসিক শিক্ষার্থী থাকতেন ৫০৬ নম্বর রুমে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নোমান বলেন, “গত ১৫ আগস্ট আমি যখন বাহির থেকে রুমে ঢুকি, তখন আমার বেডমেট আমাকে বলে, অনিক ভাইরা তোর সিট কেটে দিছে। তোর সিটে অন্য এক জুনিয়রকে উঠতে বলছে। তুই একটু ভাইদের সঙ্গে কথা বল। এরপর যখন সেই জুনিয়র আমার রুমে আসতে শুরু করে, তখন আমি অনিক ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি।

“ভাইকে বলি, ভাই আমি তো কয়েক বছর প্রোগ্রাম করেই সিট পেয়েছি। এখন আমি মাস্টার্সে। এখন তো আর আমরা প্রোগ্রাম করতে পারি না। হলের কালচারই তো এ রকম। এরপর আমি ভাইকে অনুরোধ করি, আগামী ডিসেম্বরে আমার মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে; ততদিন পর্যন্ত আপনি আমাকে থাকার সুযোগ দিন। তখন আমি নিজ থেকেই হল ছেড়ে দেব। এরপর ভাই আমাকে বলে, ‘তোমাকে কোনোভাবেই হলে রাখা সম্ভব না।’”

নোমান আরও বলেন, “এরপর উনাকে আমি আমার আর্থিক অবস্থার কথা জানিয়ে অনুরোধ করলে তিনি শেষে বলেন, ‘তুমি তোমার সিটটা ওই জুনিয়রকে ছেড়ে দাও। আপাতত তুমি ফ্লোরে ঘুমাও, তবে নিয়মিত প্রোগ্রামে যেতে হবে। তারপর তোমার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না আমি দেখব।

“এরপর যখন সেই জুনিয়র শিক্ষার্থী আমার সিটে ওঠার জন্য বেশি চাপ দিচ্ছে, তখন আমি ভাইদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। তখনও উনার একই কথা। আমাকে প্রথমে সিট ছাড়তে হবে, এরপর নিয়মিত প্রোগ্রাম করতে হবে। এরপর তারা আমার জন্য একটা কিছু ব্যবস্থা করবে।”

তিনি আরও বলেন, ‘জুনিয়র সিটে থাকবে আর আমি ফ্লোরিং করবো এটা তো সম্ভব না। আমি তো মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। আর এই বয়সে এসে নিয়মিত প্রোগ্রাম করাও তো সম্ভব না। প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হলে একটা কথা ছিল। পরে আমি বাধ্য হয়েই হল ছেড়ে দেই।’

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার বিসিএস পরীক্ষার আগের দিনও ভাই আমাকে প্রোগ্রামের জন্য ডাকেন, কিন্তু আমি আসিনি। প্রোগ্রামের জন্য বিভিন্ন সময় ফোন দিলে আমি ফোন রিসিভ করতাম না।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘সিট কাটার কোনো ঘটনা ঘটেনি। অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। আবার এটাও ঠিক যে, সে আমার ছোট ভাই। সে প্রোগ্রামে না গেলে তার জন্য আমি ব্যবস্থা নিতেই পারি। তাকে একটা নিয়মের মধ্যে যেতে হবে।’

এ ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমি এ রকম কোনো কথা বলিনি। আর তার সিটে কাউকে তোলা হয়নি। আপনি নিজে এসে দেখে যেতে পারেন।’

এরপর সেই হলের ৫০৬ নম্বর রুমে গিয়ে দেখা যায়, সিটে এনামুল হাসান নোমান নেই। তার সিটে হাসনাইন নামের একজন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী থাকছেন। রুমের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, হাসনাইন আগে ১১০ নম্বর রুমে থাকতেন। তাকে সেখান থেকে এনে নোমানের সিটে দেয়া হয়েছে।

এই বিষয়টি ফের অভিযুক্ত অনিককে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘এনামুল নোমানের সিটে অন্য কেউ থাকছে, এ রকম কোনো ঘটনার কথা আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নেব।’

অনুসারীর এ রকম ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করালে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইনান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এটা সম্পর্কে অবগত নই। আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগে এসবের কোনো সুযোগ নেই।’

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, কিন্তু সেই শিক্ষার্থী তো আমাকে কিছু জানায়নি।’

ঘটনা শোনার পর নিজ উদ্যোগে সেই শিক্ষার্থীর খোঁজ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন আমি ঘটনা শুনেছি, তখন হল অফিস বন্ধ ছিল। আর আজকে তো শুক্রবার। তাই সেই সুযোগটি হয়নি।’

তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘তুমি একটু সেই শিক্ষার্থীকে বলো সে যেন আমাকে একটা ফোন দেয়। সে হলের বৈধ শিক্ষার্থী হলে আমি তাকে অবশ্যই তার সিটে তুলে দেব।’

এ বিভাগের আরো খবর