ছয় ঘণ্টা পর রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় ছেড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে এসব কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী কয়েক দফা দাবিতে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই অবরোধ চলছিল। এরপর এলাকা ছাড়েন তারা।
আন্দোলনে পরবর্তী বর্ষে ওঠার জন্য সিজিপি-এর শর্ত শিথিল করার পাশাপাশি সর্বোচ্চ তিন কোর্স পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়ার সুযোগসহ পরবর্তী বর্ষে ওঠার সুযোগ চান আন্দোলনকারীরা। তারা কয়েকমাসের মধ্যে রেজাল্ট প্রকাশ করারও দাবি জানিয়েছেন।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাহমুদ অপু বলেন, ‘আমাদের কাছে দুইটি লিখিত নোটিশ এসেছে। একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে আরেকটি কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে।
‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে আসা চিঠিতে বলা হয়েছে, কিছুদিন পরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আর কলেজ কর্তৃপক্ষের নোটিশে বলা হয়েছে, আমাদের দাবির বিষয়ে সাত কলেজের সকল অধ্যক্ষ মিলে আগামী ২৯ আগস্ট একটা মিটিং করবেন। আমাদের দাবির বিষয়ে উনারা পজিটিভ। উনারা আমাদের পরবর্তী বর্ষের পড়াশোনা করতে বলেছেন’
শাহরিয়ার মাহমুদ অপু বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ থেকে লিখিত আশ্বাস পেয়ে আমরা আন্দোলন স্থগিত করছি। উনাদের মিটিংয়ের পরও যদি আমাদের দাবি মেনে নেয়া হয় তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।’
এই শিক্ষার্থী জানান, রোববারের আন্দোলন থেকে তাদের ১৩ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের মোড় অবরোধের কারণে সায়েন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। আর অন্যদিকের রাস্তাগুলোতে গাড়ি প্রবেশ করতে না দিয়ে গাড়িগুলোকে ভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ।
আন্দোলনকারীরা সেসময় বলেছিলেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ ছাড়বেন না। প্রয়োজনে তারা ‘গণ আত্মহত্যা’ করবেন।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
শিক্ষার্থীদের দাবি
আন্দোলনের সময় দুপুরে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে আমি প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। এরপর এতদিনে দ্বিতীয় বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষাগুলোতেও অংশগ্রহণ করেছি, কিন্তু আট মাস পরে, অর্থাৎ কয়েক দিন আগে আমাদের প্রথম বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। এতে আমি জানতে পারি, আমি দুই বিষয়ে ফেইল করেছি।
‘এখন কলেজের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী আমাকে আবার প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করতে হবে, কিন্তু আমাদের দাবি, ফেল যাওয়া সর্বোচ্চ তিন বিষয়ে মানোন্নয়নের সুযোগ দিয়ে পরবর্তী বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ চাই।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের আরেকটি দাবি হলো, পরবর্তী বর্ষে ওঠার জন্য সিজিপিএর যে শর্ত, সেটি শিথিল করতে হবে। বর্তমানে বর্ষ এবং বিভাগভেদে আমাদের একটি ন্যূনতম সিজিপিএ ধার্য করা আছে। সেটি বর্ষ এবং বিভাগভেদে টু পয়েন্ট থেকে টু পয়েন্ট ফাইভ জিরো পর্যন্ত।
‘এখন কেউ পাঁচ বিষয়ে ফেইল করার পরও যদি তার রেজাল্ট ধার্য করা সিজিপিএ পূরণ করতে পারে, তখন তাকে পাস দেখানো হচ্ছে। আর কেউ সব বিষয়ে পাস করেও যদি সিজিপিএর শর্ত পূরণ করতে না পারে, তখন তাকে দেখানো হচ্ছে ফেইল। এটা তো বৈষম্য। আমরা এই শর্ত আরও শিথিল চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত ন্যূনতম তিন বিষয়ে মানোন্নয়নের সুযোগ দিয়ে পরবর্তী বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেয়াটাই আমাদের মূল দাবি। এটা করলে সিজিপিএ শর্ত শিথিল না করলেও চলবে।’
অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা ‘নয় মাসে রেজাল্ট কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘যাব না, যাব না, নোটিশ ছাড়া যাব না’, ‘এক দফা এক দাবি, মানতে হবে মানতে হবে’, ‘ঢাবি তোমার অনিয়ম, মানি না, মানব না’ ধরনের স্লোাগান দেন।
এর আগে গত ২২ আগস্টও একই দাবিতে নীলক্ষেত মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাৎক্ষণিকভাবে দাবি মানার আশ্বাস না পেলেও রাত হয়ে যাওয়ায় এবং কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের বড় একটি অংশ ছাত্রী হওয়ায় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে অবরোধ তুলে নিয়ে ফিরে যান তারা।