বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্যাতিত শিক্ষার্থীকে মানসিক রোগী প্রমাণের চেষ্টা!

  •    
  • ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ১৮:৪৬

নির্যাতনের শিকার এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, “আমার মেয়েসহ দুই ছাত্রীকে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়- ‘তোমরা চিকিৎসা চাও, নাকি বিচার চাও? বিচার চাইলে তোমাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’ নির্যাতনকারীর পক্ষে যায়- কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাবে আমরা বিস্মিত।”

‘তোমরা চিকিৎসা চাও, নাকি বিচার চাও? যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে তোমাদের। বিচার চাইলে তোমাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রী নিবাসে ‘র‍্যাগিং’-এর শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া দুই ছাত্রীকে উদ্দেশ করে কলেজের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এমন কথা বলেছেন বলে অভিযোগ।

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে এখন র‍্যাগিংয়ের শিকার ওই ছাত্রীকে মানসিক রোগী প্রমাণের চেষ্টা করছে।

নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীর মা বলেন, ‘হোস্টেলের ওই ঘটনায় রোববার দুপুর ১২টার দিকে কলেজ প্রশাসন আমার মেয়ে ও অন্য এক ছাত্রীকে ডেকে তাদের বক্তব্য নেয়। পরে প্রশাসন আমার মেয়েকে মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে পাঠায়।’

শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের খবর সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেয়া দুই চিকিৎসক বাকী বিল্লাহ ও প্রবীর কুমার সাহা। ফাইল ছবি

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখন আমার মেয়েকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণের চেষ্টা করছে কলেজ প্রশাসন। তারা যখন দুই ছাত্রীর বক্তব্য নিচ্ছিল, নির্যাতনকারীরা তখন বাইরে অবস্থান নিয়ে হাসাহাসি করছিল। কলেজ প্রশাসনের এমন আচরণে আমরা হতাশ হয়েছি। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।’

শিক্ষার্থীর এই অভিভাবক বলেন, “নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রীকে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়- ‘তোমরা চিকিৎসা চাও, নাকি বিচার চাও? যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে তোমাদের। বিচার চাইলে তোমাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’ আমরা বলেছি, আমরা দুটোই চাই। নির্যাতনকারী ছাত্রীদের পক্ষে যায়, এমন প্রস্তাব কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।”

‘র‍্যাগিং নয়, একটু ঝামেলা’

শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. জিএম নাজিমুল হক ছাত্রী হোস্টেলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে বুধবার রাতের ঘটনাকে র‍্যাগিং হিসেবে মানতে নারাজ।

ঘটনাটিকে ‘একটু ঝামেলা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রী নিবাসের একটি কক্ষে তিন ছাত্রীর মধ্যে একটু দ্বন্দ্ব হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিলো। এক পক্ষ ছাত্রী নিবাসের ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বিচার দেয়। ব্যবস্থাপনা কমিটি বিচার করায় একজন ক্ষুব্ধ হয়। তাই সে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।’

ছাত্র-ছাত্রী নিবাসের সব ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল

শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের যে ছাত্রী নিবাসে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেটির ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে অন্য সব হোস্টেলের ব্যবস্থাপনা কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত ওইসব কমিটি শনিবার বিকেলে বিলুপ্ত করা হয়।

কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. জিএম নাজিমুল হক রোববার এ তথ্য জানান।

ছাত্রী হোস্টেলে সংঘটিত ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিচার করার এখতিয়ার ব্যবস্থাপনা কমিটির নেই। তাই তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী দিনে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা এড়াতে ছাত্রী নিবাসের শিক্ষার্থীদের কক্ষ রদবদল করা হবে।’

তিনি জানান, অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার সব শিক্ষার্থীকে হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে কেউ ঝামেলা করলে কিংবা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করলে একাডেমিকভাবে কঠোর শাস্তি দেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ।

র‍্যাগিং-এর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফাহমিদা রওশন প্রভা (ডানে) ও নীলিমা হোসেন জুঁই। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনার মূলে খোদ ব্যবস্থাপনা কমিটি

ছাত্রী হোস্টেলে দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে ওই ছাত্রী নিবাসের ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারি ডেন্টাল সপ্তম ব্যাচের ছাত্রী ফাহমিদা রওশন প্রভা ও সহকারী সেক্রেটারি নীলিমা হোসেন জুঁই অন্যতম।

৫০তম ব্যাচের ছাত্রী জুঁইয়ের স্বামী আতিকুর রহমান খান আবার শের এ বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি আবার এই হাসপাতালের সাবেক ইন্টার্ন চিকিৎসকদেরও নেতা ছিলেন।

ছাত্রী নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায়ও এই চিকিৎসকের বড় ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে।

র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নীলিমা হো‌সেন জুঁই বলেন, ‘এটা মিথ্যা অভিযোগ। এ বিষয় নিয়ে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা আমার নেই।’

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী যা বলেন

র‍্যাগিংয়ের শিকার ওই ছাত্রী বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরেই ছাত্রলীগের নেত্রী পরিচয় দেয়া ওই ছাত্রীরা আমাকে ও আমার রুমমেটকে নানাভাবে গালাগাল দিয়ে মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। এতে আমরা ভীতসন্ত্রস্ত ছিলাম। আমাদের সঙ্গে যেন এ ধরনের আচরণ আর না করা হয়, সে জন্য নেতৃত্ব দেয়া ওই ছাত্রীদেরই এক সহপাঠীকে দিয়ে অনুরোধ করাই আমরা।

‘আরেকজনকে দিয়ে অনুরোধ করানোর ঘটনায় নেত্রী পরিচয় দেয়া ছাত্রীর ক্ষেপে যান। বুধবার রাত ১১টার দিকে রুমমেটসহ আমাকে হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে আমাদেরকে দাঁড় করিয়ে তাদের সহপাঠীর কাছে কেন নালিশ করা হয়েছে তার কৈফিয়ত চান। এ সময় তারা অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন।’

র‍্যাগিং ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা ঘটনা মিমাংসায় শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে বৈঠক হয়। ফাইল ছবি

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত কয়েকজনকে আমাদের মোবাইল ফোন তল্লাশির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আধ ঘণ্টা নানাভাবে শাসিয়ে আমাদের দুজনকে কক্ষে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

র‍্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রী আরও বলেন, ‘কক্ষে ফিরে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বিষয়টি অভিযুক্তদের ওই সহপাঠীকে জানাই। তিনি ফোন করে ছাত্রলীগ পরিচয় দেয়া নেত্রীদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন। এরপর আমাকে আবার ডাকা হয়।

‘রাত ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফায় ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে আবারও গালাগাল করা হয় এবং ভয়ভীতি দেখানো হয়। এ সময় আমি কেঁদে ফেলি। অসুস্থতার কথা জানিয়ে বসতে দেয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

‘দুই ঘণ্টা ধরে এভাবে মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আমাকে কক্ষে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর পরপরই আমি অচেতন হয়ে পড়ি। পরে গভীর রাতে আমাকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

প্রসঙ্গত, বুধবার রা‌তে ব‌রিশাল শের ই বাংলা মে‌ডিক্যাল ক‌লেজের ছাত্রী হো‌স্টে‌লে দুই ছাত্রীকে একা‌ধিকবার নির্যাতনের অভি‌যোগ ওঠে ছাত্রী হো‌স্টেল ব্যবস্থাপনা কমিটির সে‌ক্রেটা‌রি ও সহকা‌রী সে‌ক্রেটা‌রির বিরু‌দ্ধে। শ‌নিবার এই ঘটনায় এক ছাত্রী ক‌লেজ অধ‌্যক্ষের কা‌ছে অভিযোগ দি‌তে যান। আর এই খবর সংগ্রহ করতে সেখানে গেলে দুই চি‌কিৎসক সাংবা‌দিক‌দের ওপর হামলা চালান।

বিষয়টি রোববার দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের নজরে এনেছেন একজন আইনজীবী। আদালত থেকে তাকে লিখিতভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর