পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকরা উচ্চৈস্বরে কথা, হাসাহাসি আর মোবাইল ফোনে কথা বলেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একজন শিক্ষার্থী। এ কারণে পরীক্ষার খাতায় মনোযোগ দিতে পারেন না জানিয়ে এর প্রতিকার চেয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ দেয়া শিক্ষার্থীর নাম মতিউর রহমান সরকার দুখু। তিনি দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
সোমবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে গিয়ে লিখিত আবেদন জমা দিয়ে আসেন তিনি। আবেদনের একটি কপি বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছেও দিয়েছেন বলে জানান মতিউর।
রোববার অনুষ্ঠিত দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ষষ্ঠ সেমিস্টারের একটি কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষার কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে বলে লিখিত অভিযোগে জানান মতিউর। তবে অভিযোগে তিনি কোনো শিক্ষকের নাম উল্লেখ করেননি।
মতিউরের আবেদনের কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা মতিউরের সাহস আছে বলে প্রশংসা করেন এবং তাকে সাধুবাদ জানান। অনেকেই আবার লিখছেন, সব বিভাগের পরীক্ষাকেন্দ্রে একই চিত্র।
তবে অনেকেই আবার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার জন্য তার প্রাতিষ্ঠানিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে মতিউর বলেন, ‘গতকাল রোববার দুপুর ২টা থেকে কলা ভবনের একটি কক্ষে আমাদের সেমিস্টারের একটি কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষায় আমি সামনের দিকে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসি। পরীক্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামনে বসা শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে উচ্চৈস্বরে আলাপ জুড়ে দেন। শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে পরীক্ষার খাতায় মনোযোগ দিতে অসুবিধা হচ্ছিল। আমি একজন শিক্ষককে আমার সমস্যার কথা জানাই। তিনি তখন আমাকে পরীক্ষাকেন্দ্রের শেষের দিকের বেঞ্চে চলে যেতে বলেন৷
কেন্দ্রের শেষের দিকের বেঞ্চে বসার কিছুক্ষণ পর আরেকজন শিক্ষক আমার পেছনে এসে বসেন এবং একটি ইংরেজি আর্টিকেল উচ্চৈস্বরে পড়া শুরু করেন। প্রায় ১ ঘণ্টা যাবত তিনি এভাবে আর্টিকেল পড়েন। তাছাড়া কেন্দ্রে মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও শিক্ষকরা পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে উচ্চৈস্বরে মোবাইলে কথা বলেন।’
মতিউর জানান, এসব কারণে পঞ্চম সেমিস্টারে প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায় শেষের দিকে বসে দিতে হয়েছে।
মতিউরের অভিযোগ, শিক্ষকরা পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ভেতরে নাশতা করেন ও উচ্চৈস্বরে হাসাহাসি করেন।
এসব সমস্যার কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয় বলেও মনে করেন তিনি।
পরীক্ষাকেন্দ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি লিখিত আবেদনে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান।
এসব বিষয়ে জানতে মতিউরকে ফোন দেয়া হলে তিনি আবেদনটি তার বলে নিশ্চিত করেন।
মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘আবেদনে আমি আরও অনেক ঘটনার বর্ণনা দেইনি। কেন্দ্রে চেয়ারম্যান স্যার ছাড়া বিভাগের প্রায় সব শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। পেছনে এসে আর্টিকেল পড়া স্যার এক ঘণ্টা যাবত এটি করেছেন। আর সে সময় উনার কাছে একটা ফোন এলে উনি সেখানে বসেই উচ্চৈস্বরে ফোনে কথা বলেন। পরে আমার মাথাব্যথা শুরু হলে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি। এসব কারণে আমার পরীক্ষাটাও ভালো হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পর যখন শিক্ষকদের জন্য নাশতা আনা হয়, তখন টিএসসিতে যেরকম উৎসবমুখর পরিবেশ, সেরকম পরিবেশ শুরু হয়ে যায়। আপা নেন, স্যার নেন, ভাই নেন... কী একটা অবস্থা! মনে হয় উনারা বেড়াতে এসেছেন কোথাও। তখন উনারা পরীক্ষাকেন্দ্রে আছেন, নাকি কারও বাসায় আছেন- সেটা বোঝা যায় না।’
এ বিষয়ে ঢাবির দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী বলেন, ‘এটা আমি দেখেছি। একসঙ্গে বসলে একটু কথাবার্তা হয়। শিক্ষকরা হয়ত খেয়াল করেননি। আমি ইতোমধ্যে শিক্ষকদের বলে দিয়েছি যেন উনারা এই বিষয়টি খেয়াল করেন।’
শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া মতিউরের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্ষতি হবে কেন? আমরা তো শিক্ষক।’