চাকরিজীবনে নিবেদিত হওয়ার পুরস্কার পেলেন একেবারে শেষদিনে। শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে একদিনও ছুটি নেননি প্রধান শিক্ষক। তাই তার চাকরি জীবনের শেষদিনে রাজকীয় বিদায় দিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রাজকীয় বিদায় নিয়েছেন শিক্ষক দুলাল আহমদ। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ভরট্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদায় নেন তিনি।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মিলনায়তনে বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আমিরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসিম আলম।
এসময় বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল এমরান হোসেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা ও মিজানুর রহমান, নজিপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক মাহমুদুল হাসান হিরো, বদলগাছী মহিলা কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম, তেঁতুলিয়া বিএমসি কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি এডিটর) আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় মিঠাপুর আর্দশ কলেজের প্রভাষক ফিরোজ হোসেন, ঢেকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রশীদ, সমাজসেবক মজিদুল ইসলাম, শিক্ষক বায়েজীদ হোসেন ও শিক্ষক নজিবর রহমানসহ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিদায়ী শিক্ষককে বিভিন্ন উপহার প্রদান করেন স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
বদলগাছী মহিলা কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দুলাল আহমদ স্যারের ছাত্র ছিলাম। স্যারকে কখনো ছুটি নিতে দেখিনি। অসুস্থ থাকলেও স্যার স্কুলে এসেছেন। স্যারের দেয়া শিক্ষা নিয়ে আজ আমরা নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত। স্যার আমাদের আদর্শ। একজন আদর্শ শিক্ষক আজ চাকরি থেকে বিদায় নিলেন তিনি। স্যার ভালো থাকুন সব সময়।’
জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্যার আমাদের খুব যত্ন করে পাঠদান করতেন। শুধু পাঠ্যবই নয়, স্যার আমাদের কর্ম ও জীবনের বাস্তবতা নিয়ে নানা ধরনের পরামর্শ ও উৎসাহ দিতেন। আমরাও চেষ্টা করতাম স্যারের ক্লাশ মনোযোগ সহকারে করার। চাকরি জীবনের শেষদিনে স্যারকে এমন আয়োজন করে বিদায় দিতে আমাদের ভালো লাগছে। স্যারের বাকি জীবন অনেক অনেক ভালো কাটুক- এই কামনা করছি।’
এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বিদায়ী প্রধান শিক্ষক মো. দুলাল আহমদ। তিনি বলেন, ‘৩৬ বছর চাকরি করেছি। এসময়ের মধ্যে আমার কোনো ধরনের ছুটির প্রয়োজন হয়নি। শিক্ষার্থীদের সবসময় পড়াশোনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছি। পরিশেষে কর্মময় জীবনে কোনো ধরনের ভুলক্রুটি করে থাকলে সবার কাছ ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বাকি জীবন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে যেন অতিবাহিত করতে পারি- সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।
‘আমার চাকরি জীবনের শেষদিন এত সুন্দর আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে আমার বিদায় হবে, এ আমি ভাবিনি। এ ছিল আমার কল্পনাতীত। এটা আমার জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি। যা বাকি জীবনটুকুতে মনে রাখার মতো। সবার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইল।’
শিক্ষক মো. দুলাল আহমদ নওগাঁ সদর উপজেলার কীত্তিপুর গ্রামের মৃত মোশাররফ হোসেন মণ্ডলের ছেলে। তিনি ১৯৮৭ সালে ৪ অক্টোবর চাকরিতে যোগদান করেন। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার।
তিনি ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব। কর্মময় জীবনে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি। তার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা ও রাজনীতিতে দেশ ও জাতির জন্য অবদান রেখে চলেছেন।