বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। কোনো শিক্ষার্থী কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য বা তাদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। তবে সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীকে।
পদ পাওয়া এই দুই শিক্ষার্থী হলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ ব্যাচের ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বি এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের হাসিন আজফার পান্থ। ঘোষিত কমিটিতে দেখা যায়, আজফার পান্থকে বানানো হয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আর রাহিম রাব্বিকে করা হয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
২০১৯ সালে বুয়েটে আবরার ফাহাদ নামে একজন ছাত্রকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুললে বুয়েটের তৎকালীন উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের এক সমাবেশে ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন।
এরপর একই বছরের ১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং কোনো শিক্ষার্থী অনুমোদিত ক্লাব/ সোসাইটি ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক দলের বা এর অঙ্গসংগঠনের অথবা অন্য কোনো সংগঠনের সদস্য হতে বা তার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
এতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বর্ণিত নিয়মসমূহ যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং তা অমান্য করলে অধ্যাদেশে বর্ণিত বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এরপর একই বছরের ২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক স্বাক্ষরিত অন্য এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (যেকোনো মিডিয়ার মাধ্যমে) কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা; রাজনৈতিক পদ ধারণ করা বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা (যার মধ্যে প্রচারণা, মিছিলে অংশগ্রহণ, সভা, গ্রাফিতি বা পোস্টার লাগানো ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত), বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যুক্ত করা; অন্যদের উপরোক্ত কার্যকলাপে অংশ নিতে বাধ্য করা, প্ররোচিত করা বা অনুপ্রাণিত করলে সতর্কতা, জরিমানা আরোপ, যেকোনো সময়ের জন্য বহিষ্কার কিংবা আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যে দুজন শিক্ষার্থীকে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি, তারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দেশব্যাপী যে আমাদের অন্যান্য কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলো সমন্বয় করবে। বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। বুয়েটে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না সেটা বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বিষয়। ’
কোনো শিক্ষার্থী রাজনৈতিক পদ গ্রহণ করলে যে শাস্তির বিধান রয়েছে, সে সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বুয়েট প্রশাসন তো এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে, একজন ছেলে মেয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্ররাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না। এটা তাদের আইনগত অধিকার নেই। যদি তারা এটি করে তাহলে এটা বেআইনি হবে।’
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটিতে যদি এখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাউকে দেয় তাহলে তো সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনীতি করলে সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তবে ক্যম্পাসের মধ্যে কেউ কোন ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।’
বিজ্ঞপ্তিতে কোন ছাত্র সংগঠনের পদ ধারণ করলেও শাস্তির আওতায় আনা হবে উল্লেখ আছে জানালে তিনি বলেন, ‘কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য হতে না পারা বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না পারার যে বিষয়টা উল্লেখ আছে সেটি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণের জন্য, ক্যাম্পাসের বাইরের জন্য নয়।’
জাতীয় সম্মেলনের ৭ মাস ৭ দিন পর শুক্রবার ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার রাতে ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।