টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার জনতা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জমজমাট পুনর্মিলনী।
শনিবার ১৯৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এ আয়োজন ঘিরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
পুরনো স্মৃতিচারণে একখণ্ড অতীতকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন উপজেলার বেলুয়া বাজারে অবস্থিত বিদ্যালয়টির ১৯৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পুরনো বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গ পেয়ে ফের যেন কিশোর-কিশোরীতে পরিণত হন তারা। হাসি, ঠাট্টা, খুনসুটিতে ভরে ওঠে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের কক্ষ।
এসময় নিজেদের পরিবার-সন্তানদেরও সঙ্গে নিয়ে আসেন আনেকে। বাবা, মায়ের এমন শিশুসুলভ আচরণ দেখে হতবাক হয় তারা। সহজ ভঙ্গিমায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় শিশু-কিশোর থেকে শুরু শেষ যৌবনের পরিণত মানুষগুলো।
শিশুদের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান মধ্যবয়সী মানুষগুলো। ছবি: নিউজবাংলা
আবেগভরা এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম মিয়া। প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন (বিএসসি স্যার)। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকবৃন্দও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বিএসসি স্যার। তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষলগ্নে এসে আবারও আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাসে আসতে পারব, তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারব- এমন স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি। সারাজীবন সহকর্মী শিক্ষক ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে সময় কাটিয়ে অবসরকালে, বৃদ্ধ বয়সে এসে একাকিত্বের কী যে যন্ত্রণা, তা আমার মতো যেসব অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন, সবাই জানেন।
‘আজ পুরনো সব ছাত্র-ছাত্রীকে নতুন, পরিণত মানুষ হিসেবে পেয়ে কী যে ভালো লাগছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
কথা বলতে গিয়ে বারবার কণ্ঠরোধ হয়ে যাচ্ছিল তার। এসময় শ্রোতার আসনে বসা তার অনেক শিক্ষার্থীকেও চোখের কোণ মুছতে দেখা যায়।
বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাবেক শিক্ষার্থীদের সাবেক প্রধান শিক্ষক। ছবি: নিউজবাংলা
সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘এ বিদ্যালয়ে থেকে পড়ে শিক্ষার্থীরা এখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কর্মে রয়েছেন। দেশের ও বিদেশের মানুষের কাছে তারা আমাাদের অঞ্চলের সুনাম বৃদ্ধি করছে। তাই তারা শুধু এই বিদ্যালয়ের নয়, আমাদের সমগ্র অঞ্চলের মুখ উজ্জ্বল করছেন। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তারা আবারও তাদের পুরনো শিক্ষায়তনে ফিরে আসায় আমি খুবই আনন্দিত ও গর্ববোধ করছি।’
এসময় সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা দেন। বক্তৃতায় তারা সঙ্গে থাকা পরবর্তী প্রজন্মকেও বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক উপদেশ দেন।
দুপুরে ব্যাপক আয়োজনে মধ্যাহ্নভোজের পর বিকেলে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র। শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি অথিতিদেরও এসময় সম্মানিত করা হয়।
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।