লোকবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নাঈমুল হককে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
২২ জুন মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ একিউএম নাছির উদ্দীন এ আদেশ দিলেও রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়।
এর আগে ২০ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন সাবেক উপাচার্য ও রেজিস্টারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন।
রোববার বিকেলে সিলেটে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আলী মর্জুজা কিবরিয়া বলেন, ‘সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের তদন্ত করছে দুদক। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় তারা দু’জনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। ফলে দুদকের পক্ষ থেকে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’
ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি বর্তমানে অবসরে আছেন এবং দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নাঈমুল হক চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন।
চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিতে ২০১৮ সালে দেশের চতুর্থ সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পায়। এরপর নগরীর চৌহাট্টায় সিভিল সার্জন কার্যালয় সংলগ্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অতিক্তি পরিচালক (অর্থ) নাঈমুল হক।
দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ভিসি ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।
সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, ইউজিসির অনুমোদিত পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভিসি ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অর্থের বিনিময়ে দেড় শতাধিক অ্যাডহক নিয়োগ দেন।
সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রমের দিকে মনোযোগ না দিয়ে শীর্ষ দুই কর্মকর্তা একের পর এক লোকবল নিয়োগ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর নিউজবাংলা ও ২৫ অক্টোবর দৈনিক বাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আরও কয়েকটি গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তদন্তে নামে ইউজিসি। ইউজিসির তদন্তে নিয়োগ বাণিজ্যের সত্যতা পাওয়ার পর তদন্তে নামে দুদক।
দুদকের তদন্তেও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে জানিয়ে দুদক সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। আমরা এখন অধিকতর তদন্ত করছি। এরপর মামলা করা হবে।’