চায়ের দোকানে বসাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ে (চবি) কর্মরত এক সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরদের বিরুদ্ধে। সাংবাদিক পরিচয় দিলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে দল বেঁধে উপর্যপুরি ওই সাংবাদিকের নিচে ফেলে লাথি মারতে থাকেন ঘটনাস্থলে থাকা নেতা-কর্মীরা।
সোমবার রাত ৮ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনে একটি চায়ের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে ভুক্তভোগী সাংবাদিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। এছাড়া তিনি চবি সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা স্টেটের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
অভিযুক্তরা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান। এছাড়াও এ ঘটনায় জড়িত আরও ১০-১২ জনের পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
অভিযুক্তরা শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ারের (সিএফসি) সদস্য। তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচয় দেন।
আহত সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ বলেন, “সন্ধ্যায় স্টেশনে চা খেতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের খালেদসহ বেশ কয়েকজন সেখানে বসে ছিল। একটি চেয়ার খালি থাকায় আমি সেটা নিয়ে আসার সময় খালেদ আমাকে বলে, ‘তুমি এটা কার অনুমতি নিয়ে নিচ্ছ?’ আমি খালেদকে আগে থেকে চিনতাম, ও আমাদের জুনিয়র। তাই বললাম, ‘তুমি করে বলছ কেন? আমাকে চেন?’ এরপর সে আমার সেশন জিজ্ঞেস করে। সেশন বলার সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে থাকা গরম চা-সহ চায়ের কাপ আমার মাথায় ছুঁড়ে মারে।
“এসময় আমি সাংবাদিক পরিচয় দিলে সে বলে, ‘তুই সাংবাদিক হইছোস তো কী হইছে?’ এ কথা বলেই তার সঙ্গে থাকা ১০-১২ জন আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা চায়ের কাপ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে থাকে এবং পেটে লাথি মারতে শুরু করে।”
তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে আরাফাত রায়হান বেশি মারধর করেছে। বাকিদেরও চিনি। তবে সবার নাম এখন মনে করতে পারছি না।
‘আমার কিডনিতে আগে থেকেই সমস্যা আছে। পেটে আঘাত পাওয়ায় পেট ফুলে যাচ্ছে, খুব অসুস্থ বোধ করছি। আমি চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভাশিষ চৌধুরী বলেন, ‘তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি বমি করে, তাহলে সিটিস্ক্যান করানো লাগবে। এছাড়া রোগীর কিডনিতে সমস্যা থাকায় ধারণা করা হচ্ছে পেটে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকে পাঠানো হয়েছে।’
ঘটনার বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ বলেন, ‘চেয়ার নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে তিনি খারাপ ব্যবহার করায় হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। তবে মারধর করা হয়নি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলা অতন্ত্য নিন্দনীয় কাজ। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিষয়টি জানাব।’
রেজাউল হক এসময় দাবি করেন, খালেদ মাসুদ, আরাফাত রায়হানসহ যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটিয়ে থাকে৷ তিনি এসবের প্রতিবাদ করেন বলেই তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার কঠিন বিচার চান।
সিএফসির একাংশের নেতা সাদাফ খান বলেন, ‘চায়ের দোকানে টেবিলে বসা নিয়ে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখে যদি ছাত্রলীগের কারও অপরাধ প্রমাণ হয়, তাহলে আমি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেব।’