ব্যক্তিগত কাজ না করে দেয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই কর্মচারীর নাম উত্তম বৈরাগী। তিনিও রেজিস্ট্রার দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। এ ঘটনার পর দুই দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না উত্তম বৈরাগী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার রাত ৮টায় কাজ শেষে বাসায় যেতে জন্য বের হন উত্তম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এলে তাকে কামাল হোসেন তার একটি ব্যক্তিগত কাজ করে দেয়ার জন্য বলেন।
উত্তম তখন জানান, সারা দিন কাজ করে তিনি এখন ক্লান্ত, তাই কাজটি করে দিতে পারবেন না।
উত্তম বৈরাগীর ‘না’ শুনে রেগে যান কর্মকর্তা কামাল হোসেন। তখন কামাল হোসেন বলেন, ‘তোর এত বড় সাহস। কর্মচারী হয়ে কর্মকর্তার মুখের ওপর কথা বলিস! তোর ঘাড়ের রগ সোজা করে দেব। ১৩ তারিখের পর (১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অবসর গ্রহণের দিন) তুই কেমনে চাকরি করিস দেখে নেব।’
পরে ওই কর্মচারী মানসিকভাবে কষ্ট পেয়ে কারও নাম উল্লেখ না করেই নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্টে লেখেন, ‘কিছু কিছু ডেপুটি রেজিস্ট্রার কর্মচারীদেরকে মানুষ মনে করেন না। তারা নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারেন। এই সব ডেপুটি রেজিস্ট্রারদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম হয়। কিন্তু সব ডেপুটি রেজিস্ট্রার সমান হয় না। কিছু মাটির মানুষও আছে। আসলে আমরা ছোট চাকরি করি, তাই আমাদের হাত-পা বাঁধা থাকে কাউকে কিছু বলতে পারি না। কেউ আমার কথা কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি খুব দুঃখিত।’
ফেসবুকে এই পোস্ট দেয়াই কাল হয়ে দাঁড়ায় উত্তম বৈরাগীর জন্য। পরদিন অভিযুক্ত কামাল হোসেন সরকার, কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের (কাজী মনির), হিমাদ্রী শেখর মন্ডল, পুলক ঘোরামীসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে উত্তম বৈরাগীকে ডেকে নিয়ে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় উত্তম বৈরাগীকে দিয়েই স্যরি বলান তারা।
এ বিষয়ে উত্তম বৈরাগী বলেন, ‘আমাকে তিনি তার একটি ব্যক্তিগত কাজে যেতে বলেছিলেন। আমি ক্লান্ত থাকায় যাইনি। সেজন্য আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। কষ্ট পেয়ে কারোর নাম উল্লেখ না করেই ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। এরপর আবারও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালাজ করে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কিছু করে কি না, তাই আমি ভয়ে দুই দিন ক্যাম্পাসে যাইনি।’
অভিযুক্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার বলেন, ‘কাজটির বিনিময়ে আমি তাকে টাকা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও সে করেনি। আমি তার বস, সিনিয়র। সে এমনভাবে বলে তাই আমার একটু খারাপ লাগে। তাকে চাকরিচ্যুত করার কোনো হুমকি দেইনি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।