ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর প্রতিবাদ এবং এই কোর্স বাতিলের দাবিতে আইন পরিবারের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের আইন অনুষদ মাঠের সোনালুতলায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আইন বিভাগে নাইট কোর্স বাতিল চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর আইন বিভাগে শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ কর’, ‘শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে আইন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি ইউজিসি রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়েছে। তাদের সেই প্রতিবেদনে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১৭ সুপারিশ রয়েছে। তার একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রপতিও বলছেন, সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করতে হবে। আর আমাদের আইন বিভাগের শিক্ষকরা ভাবছেন, যেখানে নেই সেখানেও সান্ধ্যকোর্স চালু করতে হবে। আইন বিভাগে নাইটকোর্স খোলার উদ্যোগ ২০১৭ সালেও নেওয়া হয়েছিল। সার্টিফিকেট ব্যবসার ফার্স্ট এপিসোড ছাত্ররা সফল হতে দেয়নি, এই এপিসোডও সফল হবে না।’
৪৩তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী জালাল উদ্দীন বলেন, ‘নাইটকোর্স করে কি উন্নতি হয় তা আমরা এফবিএস আর সোশ্যাল সায়েন্সে দেখেছি। আমাদের বাথরুমগুলোর নাজেহাল অবস্থা। সেখানে নাইটকোর্স চালু করে কী উন্নয়ন হবে আমি নিজেও জানি না। এফবিএসে যে খুব বেশি উন্নয়ন হয়েছে তা না। বিল্ডিং হয়েছে, এসি লাগানো হয়েছে। তা ত আমাদের এলামনাইয়রা আগের বার করে দিয়েছে। তাহলে কেন আমাদের নাইট কোর্স লাগবে? আমাদের দাবি আপনারা এই নাইটকোর্স বন্ধ করবেন। আর রেগুলার মাস্টার্সের মান বাড়ান। সেই মাস্টার্সে প্রয়োজনে বাইরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন।
৪৩ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন সিফাত বলেন, নাইট কোর্সের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ডিপার্টমেন্টের উন্নয়ন। আমরা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ডিপার্টমেন্টের উন্নয়নের জন্য কোন খাতে কত টাকা লাগবে সেই তালিকা আমাদের দিন। আমরা সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা মিলে চেষ্টা করব সেই টাকা ম্যানেজ করে দেয়ার। আমরা যদি ম্যানাজ করতে না পারি তারপর আপনারা নাইট কোর্স চালু করিয়েন। আগে আমাদের চেষ্টা করতে দিন।
৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী রাকিব হোসাইন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাদের সারাবছরে পর্যাপ্তসংখ্যক ক্লাস নিতে পারেন না, অথচ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ঠিকই সময়মতো হাজির হন। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাবস্ক্রিপশন সময়মতো রিনিউ করা হয় না, তারা দায়িত্বে অবহেলা করেন। সেখানে প্রফেশনাল মাস্টার্স খুলে টাকা কামিয়ে তারা প্রচুর উন্নতি করে ফেলবেন, একথা আমরা বিশ্বাস করি না। এই বাণিজ্যিক উদ্যোগ আইন বিভাগে বাস্তবায়িত হতে দেয়া হবে না।’
সম্প্রতি আইন বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স বা প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ইতোমধ্যেই এই বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন প্রতিবাদমূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এছাড়া বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় আইন পেশায় নিয়োজিতরাও এই কোর্স চালুর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।