ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের লেখা ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে উপাচার্যকে এই দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত উপাচার্য কার্যালয়ে গিয়ে এই স্মারকলিপি দেন।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সম্প্রতি একটি অনলাইন পোর্টালে একটি মতামত কলাম লেখেন। ওই লেখায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদের লেখা ২০০৯ সালে প্রকাশিত বইটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন।
তবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ ১৪ বছর আগে লেখা তার ওই বই নিয়ে তোলা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ ধরনের অভিযোগে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, বইটি ভুলভাবে পড়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক অধ্যাপক ফকরুল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের স্মারকিলিপিতে বলা হয়েছে, “ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার লেখা বইয়ে উল্লেখ করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৭ই মার্চের ভাষণ শেষে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন; আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যাকে ‘গণহত্যা’ বলা যাবে না এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়েও ড. ইমতিয়াজ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
“ড. ইমতিয়াজ জাতির পিতার দীর্ঘ সংগ্রাম, ৭ই মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত একাত্তরের গণহত্যা ইত্যাদি নিয়ে বেশকিছু মিথ্যা ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত জাতীয় ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো মন্তব্য করেছেন, যা একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।”
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, “একাত্তরের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক বক্তৃতার সমাপ্তিতে বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’র সাথে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন বলে দাবি করেছেন ড. ইমতিয়াজ। এছাড়াও তখনকার পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসীদের মধ্যে বিয়ে হতো, দুই অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনেক মিল ছিল, উর্দুর সঙ্গে বাংলাও পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা ছিল, দুই অংশের অধিবাসীদের মধ্যে নৃতাত্ত্বিকও অনেক মিল ছিল- এ ধরনের উদ্ভট দাবিও তিনি তার বইয়ে করেছেন; কখনো নিজের বরাতে, কখনো অন্যের মুখে শুনেছেন দাবি করে লিখেছেন।
“উল্লিখিত বিষয়গুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে চূড়ান্তভাবে মীমাংসিত হয়েছে। জাতির পিতার অবদানকে অবমূল্যায়ন কিংবা স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের শামিল মনে করে ও তীব্র ধিক্কার জানায় এবং এ ধরনের অপচেষ্টার পেছনে কোনো গূঢ় ষড়যন্ত্র রয়েছে এমন সন্দেহ পোষণের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করে।”
স্মারকলিপিতে অনূর্ধ্ব ১৫ দিনের মধ্যে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কার্যকারণ উদ্ঘাটন ও প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানানো হয়। এছাড়া অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনানুগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।