আসন্ন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিতব্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।
একাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, গুচ্ছে যাচ্ছে জবি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, গুচ্ছে থাকা না থাকা নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
চলতি বছরের ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৪ তম একাডেমিক কাউন্সিলে (বিশেষ) সর্বসম্মতিক্রমে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে ২০ মার্চ ইউজিসির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ পদ্ধতিতে থাকা আগের সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই অংশগ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ওপর হস্তক্ষেপ করে জোর করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে থাকার চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ নিয়ে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সময়ক্ষেপণ না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবি, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার কারণে নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন সংরক্ষণ, নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষা, গুচ্ছ পদ্ধতির নানা অসংগতি ও হয়রানি বন্ধ না হওয়া, সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ এবং গুচ্ছের বাইরে এই দুইভাগে বিভক্ত করে স্বায়ত্বশাসন নীতির মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে।
ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলেও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে শিক্ষা-কার্যক্রমে ছয় মাস এগিয়ে রয়েছে। এতে সেশনজটে পড়েছেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। কাজেই একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকতে পারে না।
ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সরকারই পাশ করেছে। আবার শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য সরকারই বৃহৎ স্বার্থে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সবাইকে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য একাধিকবার গুচ্ছ পদ্ধতির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও নির্দেশনা দিয়েছে। ইউজিসি শুধু তা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করেছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক বলেন, ইউজিসি তাদের সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তো আছেই। একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ে তো সিন্ডিকেট বড়। সিন্ডিকেটেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।