সংঘর্ষ, সাংবাদিক হেনস্তা, আবাসিক হলে ভাঙচুর, ছাত্রী হলে মারামারিসহ আলাদা ছয়টি ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১৮ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে ১৭ জন চবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
লিখিত আদেশের মাধ্যমে মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে এসব তথ্য জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নিয়ম অনুযায়ী বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন বহিষ্কৃতরা একাডেমিক কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। পাশাপাশি আবাসিক হলেও অবস্থান করতে পারবেন না।
যেসব ঘটনায় যাদের বহিষ্কার
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের চার নেত্রীর মধ্যে গত বছরের ১১ আগস্ট মারামারি হয়। এ ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক তাসফিয়া জাসারাত নোলককে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
কর্মরত সাংবাদিককে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগকর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আরশিল আজিম নিলয় এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শোয়েব মোহাম্মদ (আতিক)।
গত বছরের ৮ অক্টোবর আলাওল হলের কক্ষ ভাঙচুর, প্রভোস্টকে টেলিফোনে হুমকি ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগকর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শহিদুল ইসলাম।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও দেশীয় অস্ত্র হাতে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ানো, হলের দরজা-জানালা ভাঙচুর, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি, কর্তব্যরত প্রক্টরিয়াল বডি ও সাংবাদিকদের হেনস্তা করার ঘটনায় ছয় ছাত্রলীগকর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
তারা হলেন সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তনয় কান্তি শিকদার, অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের লাবিব সাঈদ, ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সিফাতুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নাহিদুল ইসলাম ও একই বর্ষের ইতিহাস বিভাগের মো. মোবারক হোসেন।
এ ছাড়া গত বছরের ২৪ আগস্ট শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আটক হওয়া ছাত্র অধিকারের কর্মী জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি পরপর দুই রাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চবির শাহজালাল ও সোহরাওয়ার্দী হলের আশপাশের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি, আশপাশের দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন ফাইন্যান্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের আমিরুল হক চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের ইকরামুল হক ও দর্শন বিভাগের একই বর্ষের নয়ন দেবনাথ, বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মাহমুদুল হাসান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোহাম্মদ ফাহিম।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনা চলতে থাকলে বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেছে বোর্ড অফ রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি। তাই সংঘর্ষের লাগাম টানতে তিনটি সুপারিশ করে কমিটি।
সুপারিশ
১. ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী মাদকাসক্ত ব্যক্তি, মাদক বিক্রি ও মাদক সেবনের স্থানে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।
২. ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের আশপাশে অছাত্র, বহিষ্কৃত ও প্রাক্তন ছাত্রদের ক্যাম্পাস ছাড়তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ।
৩. সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক ঘটনায় দেখা যায়, শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সঙ্গে কিছু কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসদাচরণ, সন্ধ্যা পরবর্তী/রাতে সংঘর্ষে জড়ানো, অনিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন, বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অন্ধকারাচ্ছন্ন করাসহ সামগ্রিক বিষয়টি ওভার সুপেরিয়রিটিতে ভোগার শামিল। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বোর্ড অফ রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনা কয়েকটি স্তরে যাচাই-বাছাই করে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে, তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন ক্ষমা চেয়েছেন; ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপে জড়াবেন না মর্মে অঙ্গীকার দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ক্ষমা করা হয়েছে।’