নতুন বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিশুরা পেয়েছে মাতৃভাষায় পাঠ্যবই। রাঙামাটিতে বসবাসরত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ শিশু শিক্ষার্থীর হাতে রোববার তুলে দেয়া হয় এসব বই।
এবার রাঙামাটি জেলার ১০ উপজেলার ১ হাজার ৬৪টি বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৯ হাজার ১৫০ শিক্ষার্থীকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি বই দেয়া হয়েছে। এছাড়া চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই দেয়া হয়।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক কার্যালয় কর্মকর্তারা জানান, জেলায় ১০ উপজেলার ১০ হাজার ৬৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের প্রতি জনে দুটি করে ১৫ হাজার ৮২০টি বই, প্রথম শ্রেণিতে প্রতি জনে তিনটি করে ২২ হাজার ৪১৬টি বই, দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রতি জনে তিনটি করে ২২ হাজার ৬৩৫টি বই ও তৃতীয় শ্রেণিতে প্রতি জনে একটি করে ৬ হাজার ৮৭৯টি বই দেয়া হয়।
রাঙামাটি শহরের বনরূপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোববার সকালে শিশুদের মাঝে পাঠ্যবই বিতরণ উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এতে অংশ নেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন, বনরূপা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা তালুকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে রাঙামাটির অন্যতম সুপরিচিত বিদ্যালয় লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে উৎসবমুখর পরিবেশে পাঠ্যবই বিতরণ করেন সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমতাস উদ্দীন। এ সময় সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিকুর রহমান, লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর মীর সোহানসহ শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পেয়ে উচ্ছ্বসিত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। তবে বইয়ের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের তাগিদ দিচ্ছেন অভিভাবকেরা।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শুভদেবী চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়ে নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পাওয়ায় ওর পাশাপাশি আমিও খুব খুশি। তবে শুধু পাঠ্যবই বিতরণ করলে হবে না। এ দিকটিতে সরকারকে আরও নজর দিতে হবে। নিজ মাতৃভাষার বইয়ের উপর পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
বনরূপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নুথুই মারমা বলেন, ‘আমার ছেলে বাংলা, ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি নিজ মাতৃভাষা মারমা ভাষার অক্ষরগুলো শিখবে এটা অত্যন্ত খুশির বিষয়। সরকারের এ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। তবে এ বিদ্যালয়ে মারমা মাতৃভাষা জানেন বা প্রশিক্ষণ দিতে পারেন এমন শিক্ষক নেই। সরকার চাইলে মারমাসহ সব ভাষায় পাঠদানে সক্ষম শিক্ষকের ব্যবস্থা সম্ভব।’
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘নিজ মাতৃভাষায় পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে এ ধরনের পাঠ্যবই বিতরণের পরপরই কিছু শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পরে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) থেকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’
শিক্ষক সংকট ও প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষকেরা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাতেও যাতে পাঠদান করতে পারেন সেই চেষ্টা চলছে। এখন প্রতিটি প্রাক প্রাথমিকে শিশুদের নিজ মাতৃভাষায় সপ্তাহে দুদিন পাঠদান করা হচ্ছে।’