পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াছিন মোল্লা। সম্প্রতি বিভাগ থেকে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে গেলে টাকা চান অফিস সহকারী। কারণ জানতে চাইলে জানানো হয়, টাকা ছাড়া কাউকে প্রবেশপত্র দেয়া হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত প্রতিটি বর্ষের শিক্ষার্থী, এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়ার সময় প্রশাসনের অননুমোদিত ও অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেকোনো ইস্যুতেই তাদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, প্রবেশপত্র প্রদান, ল্যাব পরীক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফির নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
উচ্চ মাধ্যমিক ব্যাবহারিক পরীক্ষা এবং অনার্সের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার প্রবেশপত্র গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পিয়ন ও অফিস সহকারীরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। দীর্ঘদিন ধরেই এমনটা চলে আসছে।
কলেজের এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ কলেজ প্রশাসনও পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- বিভিন্ন উৎস থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে কলেজে চলমান উচ্চ মাধ্যমিক ব্যাবহারিক পরীক্ষা ও অনার্সের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার প্রবেশপত্র গ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কে বা কারা অর্থ সংগ্রহের অপচেষ্টা করছে। এ অবস্থায় কাউকে কোনো অর্থ না দিতে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের নির্দেশ দেয়া হলো। কোনো শিক্ষার্থী এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে তাৎক্ষণিক কলেজ প্রশাসনকে অবহিত করতে বলা হলো। অননুমোদিত কোনো ধরনের লেনদেনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন কাগজে-কলমের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে কলেজ প্রশাসনের আরও আগে থেকেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল। প্রশাসন বিষয়টি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রেখে কোনো তদারকি না করলে এই অপতৎরতা আবারও শুরু হবে। কলেজ প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা। একই সঙ্গে এসব কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ মো. মোহসিন কবীর বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর পরই কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়েছে। বিভাগগুলোতে শিক্ষকরা যেন নিজ হাতে প্রবেশপত্র বিতরণ করেন সে ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে সভা করেছি। সবাইকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও কেউ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। ক্যাম্পাস থেকে সব অনিয়ম দূর করে সুন্দর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা কাম্য।’