বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরীক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষক বেশি

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৮:৪৮

কুড়িগ্রাম জেলায় অনেক প্রতিষ্ঠানে এবার ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, ‘শিক্ষকের চেয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে এসএসসি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। শুধু ফলাফল বিপর্যয় হওয়া প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা উচিৎ।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ জন শিক্ষক ও ৫ জন স্টাফ কর্মরত থাকলেও ওই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মাত্র চার জন। এর মধ্যে একজন ফেল।

রাজারহাট উপজেলার সুন্দরগ্রাম পুটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। যাদের মধ্যে ১২ জনই ফেল করে। বিদ্যালয়ে ১৫ জন শিক্ষক এবং চার জন স্টাফ।

জেলার অনেক প্রতিষ্ঠানেই পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা কাছাকাছি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খামার বড়াইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ১৪ জন,স্টাফ ৬ জন কর্মরত আছেন। এই বিদ্যালয়ে ২০২১-২২ সেশনে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করে ৪০ জন শিক্ষার্থী। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় নাম লিখিয়েছে (ফরম ফিল-আপ) ১৬ জন। পরীক্ষায় মাত্র চার জন অংশ নেয়, যাদের সবাই ফেল করেছে।

শতভাগ ফেলের ঘটনা না ঘটলেও সদরের যাত্রাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র প্রায় একই। এই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করে ৫১ জন। এসএসসিতে নাম লেখায় ৪০ জন এবং পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩৬ জন। এদের মধ্যে ২০ জন পাস আর ফেল ১৮ জন। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক ১১ জন, স্টাফ ৪ জন।

এই উপজেলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করে ৪২ জন এবং এসএসসিতে ফরম ফিলাপ করে ৩০ জন। তারা সবাই পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করে ১৬ জন এবং ১৪ জন ফেল করে। এখানে শিক্ষকের সংখ্যা ৯ জন, স্টাফ চার জন এবং শূন্য পদ আছে চারটি।

সারডোব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নেয়া সাত জনের মধ্যে তিন জন ফেল করে। নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান পূর্ব কুমোরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নেয়া তিন জনের মধ্যে ফেল করে একজন।

একতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫ জনের মধ্যে ১৬ জন ফেল করে। নগরাজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অংশ নেয়া ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন ফেল।

আজোটারি মাস্টার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৮ জনের মধ্যে ফেল করে ৯ জন। রাঙ্গামাটি সরদার পাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১২ জনের মধ্যে ৭ জন ফেল করে। উত্তর রাবাইতারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ জনের মধ্যে ফেল ১৩ জন। এক সময়কার ছিটমহল দাশিয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে ফেল করে ১১ জন। কামালপুর ময়নুল হক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২৫ জন অংশ নিয়ে ১২ জন ফেল করে।

শংকর মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১০ জন। তাদের মধ্যে ৭ জন ফেল করে।

ভীমশর্মা উচ্চ বিদ্যালয় ১৪ জন অংশ নিয়ে ১১ জন ফেল করে। এই বিদ্যালয়ে নিম্ন মাধ্যমিক এমপিওভুক্ত শিক্ষক সাত জন, স্টাফ একজন। বটতলা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১০ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল।

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি।

খামার বড়াইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল হক শতভাগ ফেলের কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। দারিদ্র্যের কারণে ছেলে শিক্ষার্থীরা কাজের জন্য ঢাকায় চলে যায়। তা ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী সংকট তৈরি হয়েছৈ। আর এ কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে।

অনন্তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম স্বীকার করেন তার বিদ্যালয়ে ৯ জন শিক্ষক এবং ৫ জন স্টাফ কর্মরত থাকলেও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মাত্র চার জন। এর মধ্যে একজন ফেল করেছে।

যাত্রাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, তার বিদ্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশনকৃত সকল শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। চরাঞ্চল এবং নদী ভাঙ্গন এলাকা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। এতে করে পড়ালেখা ব্যাহত হওয়ায় ফেলের হার বেশি।

ভীমশর্মা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ফেলের হার বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায় পাঁচ জন ননএমপিও শিক্ষক। তারা ২০০৪ সাল থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’

খামার বড়াইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সবুজ আলম বলেন, ‘এই স্কুল থেকে যে চার জন পরীক্ষা দিয়েছে, তার মধ্যে দুটি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর দুজন ছেলে ঢাকায় কামলা দিয়ে এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তারা কেউ নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল না।’

একই এলাকার অভিভাবক শাহেরা বেগম বলেন, ‘স্কুলত ঠিক মতো মাস্টাররা আসে না, ক্লাসও হয় না। তাই দুই কলম শেখানোর জন্য সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিছি।’

দেবিচরণ গ্রামের অভিভাবক দুলাল মিয়া সুন্দরগ্রাম পুটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয় ফেলের হার বেশি হবার জন্য শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করেন। তার মতে, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন আসক্তির কারণে পড়ালেখা করেনি শিক্ষার্থীরা। তাই এবার বেশি ফেল করেছে।

আরেক জন অভিভাবক শাবানা বেগম বলেন, ‘অটো পাসের চিন্তা ছেলেমেয়েদের মাথায় ঢোকার কারণে এবার পড়াশোনা করে নাই। অভিভাবকরাও ততটা গুরুত্ব দেয় নাই অটো পাসের চিন্তা করে।

এ শিক্ষক, অভিভাবক, বিদ্যালয় কমিটিসহ কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি ও ফলাফল হতাশাজনক বলে জানান স্থানীয়রা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন এ জেলায় ফলাফল বিপর্যয় কারণ হিসেবে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সচেনতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘শহরের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে আছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার, নজরদারির অভাবে এমন ফলাফল হয়েছে। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে।’

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, ‘শিক্ষকের চেয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে এসএসসি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। শুধু ফলাফল বিপর্যয় হওয়া প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা উচিৎ।’

কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৪৪টি।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী কুড়িগ্রাম জেলায় ২০২২ সালে এসএসসি পরিক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল ১৯ হাজার ২০৩ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২০৩ জন। পাস করেছে ১৪ হাজার ৪০৭ জন। জেলায় গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক শূন্য ২ ভাগ।

এ বিভাগের আরো খবর