সরকারি স্কুলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি হলে পছন্দের প্রতিষ্ঠান না মিললেও আসন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না শিক্ষার্থীদের। ভর্তির ক্ষেত্রে সব আসন পাবেন শিক্ষার্থীরা। এমনটি জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সরকারি বিদ্যালয়ের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রমে ভর্তির ডিজিটাল লটারি উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘সব শিক্ষার্থী পছন্দের স্কুলে ভর্তির সুযোগ না পেলেও ভর্তির আসন পাবেন। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তুলনায় সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত আসন আছে।’
এ বছর লটারিতে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য সরকারি বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৮৯০ টি শূন্য আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৯টি। সেই হিসেবে প্রতি আসনে ভর্তি হতে লড়বে ৫ দশমিক ৮ জন।
বেসরকারিতে ৯ লাখ ২৫ হাজার ৭৮০ টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৯৩৩টি। ফলে বেসরকারি আসন খালি থাকবে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪৭ টি।
মন্ত্রী বলেন, ‘তাই সব শিক্ষার্থী হয়তো পছন্দের স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত আসন আছে।’
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি স্কুলে আমরা দেখছি আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের আবেদন কম। তাই বলা যায়, সকল শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পাবেন। আগে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড মানসিকচাপে থাকত। এখন শিক্ষার্থীরা তা থেকে মুক্ত হয়েছে। নতুন শিক্ষা কার্যক্রম অনুযায়ীও শিক্ষার্থীরা চাপমুক্ত থেকে শিখবে। আমাদের লক্ষ্য সকল স্কুলই হবে সেরা স্কুল।’
অনেক প্রতিষ্ঠান বেছে বেছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে, যার ফলে তারা ভালো ফল পায় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আসল কৃতিত্ব দেখা যাবে যখন একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।’
ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা দূর করতেই ডিজিটাল লটারি চালু করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক সমস্যা আছে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে। লটারি নিয়ে অনেকেই খুশি। যদিও কিছু অভিভাবক এতে অসন্তুষ্ট। কিন্তু এর মাধ্যমে ভর্তি-কোচিং বাণিজ্য, অবৈধ শিক্ষার্থী ভর্তি, তদবির বন্ধ হয়েছে।’
লটারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম হাবিবুর রহমানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও টেলিটকের কর্মকর্তারা।
উদ্বোধনের আগে টেলিটকের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই লটারি সম্পূর্ণ অটোমেশন পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। এতে কোনো ত্রুটি থাকার সুযোগ কম।
এই লটারি ১০ ডিসেম্বর হবার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে বেসরকারিতে আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় হবে।
স্কুলে ভর্তির নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (https://gsa.teletalk.com.bd/) লটারির ফল দেখা যাবে।
সরকারি স্কুলে ৫৯ শতাংশ আসন কোটায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি সুযোগ পাবেন মাত্র ৪১ শতাংশ আসনে। গত সোমবার সরকারি স্কুল ভর্তিতে নীতিমালা জারি করে প্রজ্ঞাপন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
এতে দেখা যায়, এবার প্রথমবারের মতো ২ শতাংশ সিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষার দপ্তর ও সংস্থার কর্মীদের সন্তানদের জন্য। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার বা তাদের ছেলে বা মেয়ের পরিবারের সন্তানরা পাবে ৫ শতাংশ, কেচমেন্ট এরিয়ায় বসবাসরত শিক্ষার্থীরা ৪০ শতাংশ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু (প্রতিবন্ধী) শিক্ষার্থী ২ শতাংশ কোটা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির মোট আসনের ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। সব মিলিয়ে মোট আসনের শতকরা হিসেবে ৫৯ শতাংশ আসন বিভিন্ন কোটায় সংরক্ষিত থাকছে।