বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডলার সংকটে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নভঙ্গ

  •    
  • ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৪২

বিদেশে পড়তে দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন খরচ পাঠাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের একটি ‘ফাইল’ খোলা বাধ্যতামূলক। কিন্তু চলমান ডলার সংকটের কারণে নতুন ফাইল খোলা প্রায় বন্ধই রেখেছে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক।

বিদেশে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার স্বপ্ন দীর্ঘদিন ধরে পুষে রেখেছেন ইমতিয়াজ ইকবাল। নানান শর্ত পূরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগও পান এই শিক্ষার্থী। কিন্তু তীরে এসে তরি ডোবার অবস্থা। অর্থনীতিতে মন্দা, ব্যাংকে ডলার সংকট। খোলা যাচ্ছে না ‘ফাইল’।

ইকবাল বলেন, ‘কয়েকটি ব্যাংক ঘুরে যখন ব্যর্থ হই, তখন মনই ভেঙে যায়। শেষমেশ একটি ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে এক কর্মকর্তার কাছে গিয়ে অনুনয়-বিনয় করে ফাইল খোলা গেছে; পরিশোধ করা হয়েছে ফি। কিন্তু আমার সঙ্গে যেতে ইচ্ছুক অনেকেই ফাইল খুলতে ব্যর্থ হয়েছে।’

বিদেশে পড়তে দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ভর্তি, টিউশন, আবাসন ফিসহ বিভিন্ন খরচ পাঠানোর জন্য বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের একটি ‘ফাইল’ খোলা বাধ্যতামূলক। কিন্তু চলমান ডলার সংকটের কারণে এ-সংক্রান্ত নতুন ফাইল খোলা প্রায় বন্ধই রেখেছে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। অনেকেরই ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন।

তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে না পেলেও মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলার মিলছে। তবে সেখানে গুনতে হচ্ছে চড়া দাম। ব্যাংকের মাধ্যমে এক ডলার ১০৬ থেকে ১০৭ টাকায় পাওয়া গেলেও মানি চেঞ্জারে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা গুনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার কারণে ডলারের ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ে ব্যত্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধের ক্ষমতা বিবেচনায় বাজারে এলসির চাহিদা পূরণ করছে।

‘এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট করে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। যখনই তাদের ডলার ইন-ফ্লো আসবে, ব্যাংকগুলো তখন তাদের বিভিন্ন সেক্টর বিবেচনায় কাজ করবে। এখানেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’

বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে, এই মুহূর্তে আমাদের ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে। তবে এটি অন্যান্য দেশেও পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা মোতাবেক ডলার জোগান দিচ্ছে ব্যাংকগুলোতে।

‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো ব্যাংকের জন্য ডলার অনেক মূল্যবান। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আপাতত আমরা বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছি।’

বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ডলার কত

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত ছয় অর্থবছরে মোট ১৩৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা হিসাবে)।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবরে পাঠানো হয়েছে ১৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৬০৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ১৫ কোটি ৪ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৭ লাখ ডলারে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাঠানো হয় ১৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ২১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে। পরের অর্থবছরে গেছে ২৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ কোটি ৫১ লাখ ডলার।

বিদেশি শিক্ষার্থী কত

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কত সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছেন, তার একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো।

সংস্থাটির ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থী বিদেশে গিয়েছেন উচ্চশিক্ষা নিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছর উচ্চশিক্ষার জন্য দেশটিতে গিয়েছেন ৮ হাজার ৬৬৫ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

এরপরেই রয়েছে মালয়েশিয়ার অবস্থান। দেশটিতে উচ্চশিক্ষা নিতে ৭ হাজার ৫৪৮ জন শিক্ষার্থী গিয়েছেন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন ৫ হাজার ৬৪৭ জন।

এ ছাড়া কানাডায় ৫ হাজার ১৩৬, জার্মানিতে ৩ হাজার ৯৩০, যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ১৯৪, ভারতে ২ হাজার ৭৫০, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ হাজার ১৭৬ ও সৌদি আরবে ১ হাজার ১৬৮ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গত বছর উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়েছেন।

ডলার দর

গত বছরের আগস্ট থেকে দেশে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে। দেখা দিতে থাকে ডলারের সংকট, বাড়তে থাকে দর। শক্তিশালী হতে থাকে ডলার, দুর্বল হতে থাকে টাকা। বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা। এক বছর আগেও এটি ছিল ৮৪-৮৫ টাকা।

এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলারের জোগান দিলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারাও হাত গুটিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে এখন নিজেদের ডলার দিয়ে চলতে হচ্ছে, কিন্তু প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে টান পড়ায় সেই সক্ষমতাও হারাতে বসেছে তারা।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ডলারের চড়া দরের কারণে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৮১ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। অর্থবছর শেষ হয়েছিল গত ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে।

এ বিভাগের আরো খবর