চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাসে মাদক নিয়ে বিতর্কে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ জমা পড়েছে উপাচার্যের কাছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালককে স্মারকলিপি দিয়েছে সাংবাদিক সমিতি। সাংবাদিক লাঞ্ছনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে মাদক বিস্তারের প্রতিকার চেয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অভিযুক্তদের ডোপটেস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে সমিতি।
চুয়েট সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থী বাসে মাদক সেবনের ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক লেখালেখি করলেও কাজ হয়নি।
‘মঙ্গলবার চুয়েট সাংবাদিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দেন। তিনি নিউজপোর্টাল ডেইলি ক্যাম্পাসের চুয়েট প্রতিনিধি। তার ফেসবুক পোস্টের কারণে ক্ষিপ্ত হয় মাদকসেবীরা।’
এ ঘটনার জেরে ছাত্রলীগের একাংশ সাংবাদিক নেতাদের নাজেহাল করেন বলে জানান নাজমুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘বুধবার সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জিওন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সায়েদ চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে ডেকে নেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা আইদিদসহ ১০ জন। তারা দুই সাংবাদিককে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে গালাগালি ও হেনস্তা করেন। মাদকের বিরুদ্ধে লেখালেখি করলে তাদের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না বলে হুমকি দেয়া হয়।
‘বিকেল ৪টার দিকে গোলাম রব্বানীকে ডেকে নিয়ে তারা মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এরপর গালাগালি ও মারধর করেন।’
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের সদ্যোবিলুপ্ত কমিটির উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আইদিদ আলম বলেন, ‘মাদকের বিষয়টি মিথ্যা। চুয়েটে কেউ মাদক সেবন করে না। আমরা ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। মূলত ১৮ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে মেয়েদের তৃতীয় লিঙ্গের প্রাণী বলায় তাকে ডেকে বিষয়টি বলা হয়েছে। সেখানে মারধরের ঘটনা ঘটেনি। জিওন ও সায়েদ আমাদের ব্যাচের, তাই তারা আলোচনার সময় সঙ্গে ছিলেন।’
চুয়েট ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘একটা অভিযোগ সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে আমাকে ও উপাচার্য মহোদয়কে জানানো হয়েছে। একটা ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। আমাদের কাছে যেহেতু অভিযোগ এসেছে, আমরা বিষয়টি দেখছি।’
মাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী বাসে মাদক সেবনের অভিযোগ এসেছে, বিশেষ করে রাতের বাসে। আমরা রাতের বাসে লাইট জ্বালিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছি। আর আমাদের একটা নতুন বাস যোগ হচ্ছে, সেখানে সিসিটিভি থাকবে। এসব বিষয়ে যদি প্রয়োজন হয়, আমরা ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করব।’
সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলে ইয়াবা পাওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। সে বিষয়ে অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘ইয়াবা পাওয়ার কথা সত্য নয়। কয়েকজনের কাছে ধূমপানের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। ইয়াবা, গাঁজা বা মাদক সেবনের কিছু পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধানে মাদক সেবনের শাস্তির কথা উল্লেখ নেই। তবে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হয় এমন কিছু এখানে করা যাবে না।’