উচ্চমাধ্যমিকের (এইচএসসি) বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক’ প্রশ্ন রাখার ঘটনায় পাঁচ শিক্ষককে দোষী সাব্যস্ত করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটি।
এই শিক্ষকদের অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশও করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানান।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাল (বুধবার) তদন্ত রিপোর্ট যশোর বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছিল। আজ ফার্স্ট ফ্লাইটে সেটি ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও আন্তবোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে।’
কী ধরনের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তদন্ত কমিটি সিলগালা করে রিপোর্ট চেয়ারম্যান স্যারের কাছে জমা দিয়েছেন। সেখানে কী ধরনের শাস্তির কথা আছে, সেটি আমার জানা নেই।’
এ ঘটনায় দোষী শিক্ষকদের কী ধরনের শাস্তি হতে পারে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিও বাতিলসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের লঘু ও গুরু যেকোনো শাস্তি হতে পারে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে ৮ নভেম্বর প্রশ্নপত্রে ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক’ প্রশ্ন রাখার ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এ কে এম রব্বানী।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম ও উপকলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাশ।
৬ নভেম্বর সারা দেশে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়। ঢাকা বোর্ডের ‘কাসালাং’সেটের নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশের ১১ নম্বর প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষয়টি উঠে এসেছে।
আর ৮ নভেম্বর এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পাঁচ শিক্ষককে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
ওই প্রশ্নপত্র প্রণয়নে যশোর শিক্ষা বোর্ডের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক জড়িত ছিলেন বলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার জানিয়েছিলেন।
ওই দিনই এ ঘটনায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্যাডে চিহ্নিত শিক্ষকদের নাম ও পরিচয়সংবলিত একটি অস্বাক্ষরিত নথি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের সংবাদমাধ্যমকে সরবরাহ করেন।
তাতে বলা হয়, ‘বাংলা প্রথম প্রত্রের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রশ্নপত্রটি যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত।’
বাংলা প্রথম পত্রের বিতর্কিত প্রশ্নটি করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। আর প্রশ্নপত্রটি পরিশোধনের (মডারেশন) দায়িত্বে ছিলেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দীন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
প্রশ্নে যা ছিল
প্রশ্নের একটি অংশে বলা হয়, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ-বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আবদুল নামের এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
‘কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
এই গল্প উল্লেখ করে প্রশ্নপত্রে চারটি প্রশ্ন করা হয়। তার দুটি এ রকম: ‘মীরজাফর কোন দেশ হতে ভারতে আসেন? উদ্দীপকের নেপাল চরিত্রের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মীরজাফর চরিত্রের তুলনা করো?’