বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শ্রুতিলেখকের কলমে স্বপ্ন যাদের

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৫১

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যারা শ্রুতিলেখক হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন, তাদের পরীক্ষার্থীর চেয়ে নিচের ক্লাসের হতে হয়। সব ধরনের নিয়ম মেনেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা তাদের পরীক্ষা দিচ্ছেন। দৃষ্টিসম্পন্ন সবার জন্য অনন্য উদাহরণ এই শিক্ষার্থীদের জন্য দোয়া রইল।’

পাশাপাশি বসে দুজন পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রশ্ন শুনে দৃষ্টিহীন একজন উত্তর বলছেন, অন্যজন তার উত্তর লিখে দিচ্ছেন। শ্রুতিলেখকের হাতেই পরীক্ষার খাতায় স্বপ্ন বুনে চলছেন তারা। প্রতিবন্ধকতার বন্ধনটা তারা ছিঁড়ে ফেলতে চান, স্বপ্ন তাদের আকাশ ছোঁয়া।

হার না মানা জন্মান্ধ এমন ১২ শিক্ষার্থী এবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন দৃষ্টিহীন অপু চন্দ্র দাস ও তানিম হোসেন।

তারা জানান, পরীক্ষার হল সরকারি কলেজের ৩৪২ নম্বর কক্ষে। তারা উত্তর মুখে বলছেন, পাশে বসে দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী উত্তরপত্রে সেই উত্তরগুলো লিখছেন। দৃষ্টিহীন বলে অতিরিক্ত ২০ মিনিট বরাদ্দ থাকে তাদের জন্য।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজের পাঠ চুকাতে শ্রুতিলেখক নিয়েই বসেছেন পরীক্ষার বেঞ্চে।

অপুর শ্রুতিলেখক দশম শ্রেণির মনির হোসেন।

অপু বলেন, ‘আমার ভালো প্রস্তুতি। আমি বেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করি। দুই বছর ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি।’

তার শ্রুতিলেখক মনির বলেন, ‘অপু ভাইয়ের পরীক্ষা ভালো হচ্ছে। আমি প্রশ্ন পড়ে শোনাই, অপু ভাই আমাকে গুছিয়ে উত্তর লিখতে বলেন। দুটি পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে।’

কুমিল্লা নগরীর চর্থা এলাকায় সৈয়দা জাহানারা হায়দার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসে থাকেন অপু ও তানিম। সেখানে অন্তত ১০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন।

সহপাঠী ও স্থানীয়রা জানান, অপুর বাড়ি কুমিল্লার হোমনা উপজেলা সদরের পূর্বপাড়ায় আর তানিমের বাড়ি সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দে। দুজনই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। একদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার বন্ধন, অন্যদিকে অর্থনৈতিক টানপড়েন। তারা থামতে চান না। পরিবার ও হৃদয়বানদের সহযোগিতায় পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের ইচ্ছা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। তারপর পেশাগত জীবনে প্রবেশ করা।

নিজের জীবনের লক্ষ্য বলতে গিয়ে তানিম বলেন, ‘আমার বাবা মাছ ধরার জাল তৈরি করেন। অনেক কষ্টে আমাদের চার ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেন। আমি আমার বাবার দ্বিতীয় সন্তান। আমি চাই একজন আদর্শ শিক্ষক হতে, যাতে করে আমার ছাত্রদের আমি স্বপ্ন দেখাতে পারি। তাদের মানুষের মতো মানুষ করতে পারি। তাদের চোখে বিশ্ব দেখব আমি।’

অপু বলেন, ‘আমার ইচ্ছা একজন ব্যাংকার হওয়া। আমার একজন শিক্ষক ছিলেন জন্মান্ধ। তিনি লেখাপড়া করে সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার হয়েছেন। পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনেছেন। আমিও আমার পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনতে চাই।’

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের প্রতি যদি আমরা আরও একটু সচেতন হই, তাহলেই তারা পড়ালেখা নিয়মিত করতে পারে। কুমিল্লা বোর্ডে এ বছর অন্তত ১২ জন প্রতিবন্ধী তাদের শ্রুতিলেখকের সহায়তায় এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। শ্রুতিলেখক নিয়োগের জন্য শ্রুতিলেখকের অভিভাবক এবং তার প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি প্রয়োজন।

‘যারা শ্রুতিলেখক হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন, তাদের পরীক্ষার্থীর চেয়ে নিচের ক্লাসের হতে হয়। সব ধরনের নিয়ম মেনেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা তাদের পরীক্ষা দিচ্ছেন। দৃষ্টিসম্পন্ন সবার জন্য অনন্য উদাহরণ এই শিক্ষার্থীদের জন্য দোয়া রইল।’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন বলেন, ‘অপু ও তানিম মেধাবী শিক্ষার্থী। ভিন্নভাবে সক্ষম এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক-সহপাঠীরা আন্তরিক ও সংবেদনশীল। অনন্য প্রতিভার অধিকারী আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে মানবসম্পদ হয়ে গড়ে উঠছে। স্বাবলম্বী হয়ে সমাজে অবদান রাখতে তারা দৃঢ়প্রত্যয়ী। তারা আমাদের অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা।’

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি ওই দুই শিক্ষার্থীর সম্পর্কে জানি। তারা মেধাবী। লেখাপড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ অসাধারণ। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।’

এ বিভাগের আরো খবর