পরীক্ষার আগের রাতেই মিলেছে প্রশ্ন। পাওয়া গেছে ম্যাসেঞ্জারে। এক বন্ধুর ইনবক্স থেকে অন্য বন্ধুর ইনবক্সে। ভুয়া ভেবে হেলায় ফেলে দিয়েছেন সবাই। পরদিন পরীক্ষায় প্রশ্ন মিলেছে হুবহু। আর এতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে জেগেছে ক্ষোভ।
রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে পরীক্ষার আগের রাতে ৩০ অক্টোবর। পরদিন সোমবার সকালে কলেজে পরীক্ষা হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তারপরেও পরীক্ষা নেয়ার কারণ হিসেবে তারা পরীক্ষা শুরুর আগে জানতে না পারার কথা বলেছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কলেজ শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগও করেছেন। তবে কে বা কারা প্রশ্ন ফাঁস করেছে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নটি পেয়েছি। আমাদের এক বন্ধু গতকাল সন্ধ্যায় মেসেঞ্জারে প্রশ্ন পাঠিয়েছে। সেও অন্য একজনের থেকে পেয়েছে জানিয়েছে। আমরা অতটা গুরুত্ব দেইনি। ভেবেছিলাম এমন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে না। কিন্তু আজ পরীক্ষা দিতে এসে দেখলাম হুবহু একই প্রশ্ন। প্রশ্নটা দেখে আমরা রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম।’
তামান্না নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার রাত জেগে এত কষ্ট করে পড়াটা বৃথা গেল। যারা নিয়মিত স্যার ম্যামদের কাছে শুরু থেকেই প্রাইভেট কোচিং করে আসছে তারা সবসময় একটা সুবিধা পেয়েছে। ক্লাসে তাদেরকে বেশি মূল্যায়ন করা, তাদেরকে এসে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করাসহ নানা রকমের প্রশংসা তারা পেয়ে থাকে। আগেও আমি এই কলেজে এমন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা শুনেছি। কিন্তু তা কখনও বিশ্বাস করিনি। কিন্তু আজ তো নিজেই তার স্বাক্ষী হয়ে থাকলাম।’
একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রায়হান হকের বাবা মো. হেলাল বলেন, ‘এই কলেজের ইতিহাস ঐতিহ্য ও পড়াশোনার মান সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা ছিল। কিন্তু আজ আমার ছেলের কাছে শুনলাম তার বন্ধু-বান্ধবরা আজকের পরীক্ষার প্রশ্ন গতকালকেই পেয়ে গেছে। আজ পরীক্ষা দিতে গিয়ে এটা শুনে সে অনেকটা হতাশ হয়ে গিয়েছে। এমন কাজকর্মের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমি চাই এই প্রশ্ন ফাঁসে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।’
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলছেন, যত্রতত্র গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারের বাণিজ্য চাঙ্গা করতেই এসব প্রশ্ন ফাঁস করা হচ্ছে। কলেজ কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবহেলাই এসব অপকর্মের জন্য জড়িত।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ বি এস এ সাদী মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বিষয়টি জেনেছি। এর আগে জানলে অবশ্যই পরীক্ষা স্থগিত করা হতো। আমরা আগামীকাল পরীক্ষা কমিটি ও শিক্ষকদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে কী করা যায় সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা বেগম বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। চোরদের তো আর এভাবে ছাড় দেয়া যায় না। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’