আগামী বছর থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিফটে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব আমিনুল ইসলাম খান।
সচিবালয়ে রোববার ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব বলেন, ‘আমাদের দুই কক্ষের স্কুল আছে। এক কক্ষেরও স্কুলও আছে। তিন কক্ষের স্কুলও আছে। এই দুই কক্ষে তো আসলে ছয়টা ক্লাস চালানো সম্ভব না। আর রাতারাতি আমরা ভবনও নির্মাণ করতে পারছি না। আমরা ছাত্র ও শিক্ষকসংখ্যা সবকিছু বিবেচনা করে দেশের সব স্কুলকে এক শিফটে আনার পরিকল্পনা করেছি।
‘সে ব্যাপারে কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দেখা যেত কোনো স্কুলই বন্ধ হচ্ছে না। কোনও শিক্ষকই চাকরি হারাচ্ছেন না। সবই ঠিক থাকছে, কিন্তু আমরা কাজটিকে ভাগ করছি, দুই কক্ষ আছে, সেখানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক থাকছে। আবার যেখানে ভবন করার সুযোগ আছে, সেখানে ভবন করব। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি, দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এক শিফটে নিয়ে আসব।’
তিনি বলেন, ‘একেক জায়গার জন্য আমরা একেক ধরনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করব, যে কারণে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগছে। আমরা পর্যায়ক্রমে কাজটি করব, কিন্তু কোথাও স্কুলসংখ্যা কম, এমনও গ্রাম আছে, যেখানে তিন কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র একটি স্কুল। তাতে দুটি কক্ষ আছে। সেখানে কক্ষ বাড়ানো ছাড়া কিছু করার সুযোগ নেই, যে কারণে আমরা বিভাগ অনুসারে, জেলা অনুসারে, উপজেলা অনুযায়ী, যেমন চরাঞ্চলে, হয়তো সেখানে ছাত্রসংখ্যা ৫০ জন, কিন্তু স্কুলটি রাখতে হচ্ছে।
‘কারণ চরে তার পড়বার কোনো ব্যবস্থা নেই, যে কারণে বিষয়গুলো ঘটনা অনুসারে পর্যালোচনা করছি এবং নির্ভুলভাবে করার চেষ্টা করছি। আগামী জানুয়ারি থেকেই আমরা এটি করতে পারব। পুরোটা করতে না পারলেও অনেকটা শেষ করব।’
সব প্রাথমিক স্কুল এক শিফটে এলে ক্লাসের সময়সূচি কী হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘ঢাকা কিংবা মহানগর এলাকার একটি সময় আছে, কিন্তু গ্রামের স্কুলগুলোতে একটু দেরি করে ক্লাস শুরু হয়। আবার স্কুলগুলো গ্রামে হলেও শিক্ষকেরা শহরে থাকেন, যে কারণে যাতায়াতের ব্যাপারটিও আমরা বিবেচনায় রাখছি, কিন্তু আমাদের লক্ষ হলো, শিক্ষকেরা ক্লাসে থাকছেন কি না, সেটির ওপর।
‘কারণ আমরা চাই, শিক্ষকেরা যাতে নিয়মিত পাঠদান করেন। আর টিচিং লার্নিং সময়টাও আমরা বাড়াতে চাই, যে কারণে আমরা এক শিফটে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। তিন ঘণ্টার জায়গায় আমরা সাড়ে চার ঘণ্টা/পাঁচ ঘণ্টা করতে চাই।’
ঢাকার অনেক স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী আছে। সেখানে তাদের এক শিফটে নিয়ে এলে শিশুদের অন্য স্কুলে পাঠানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমাদের কোথাও কোথাও ঘটনা অনুসারে ভাবতে হবে। এই সংকটটা মহানগরীগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে। আবার আইডিয়াল স্কুলের পাশে সুন্দর অবকাঠামোসহ স্কুল আছে। সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। এতে সেখানে শিক্ষার মান বাড়ছে না। অথচ সেখানে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকেরা আছেন।
‘শিক্ষার্থীরা গেলে তো স্কুলটা কার্যকর হবে, যে কারণে আমরা চাই, আমাদের দেশের সব স্কুল সমমান সম্পন্ন হোক। যেমন কোনো স্কুল খুব সেলিব্রেটেড অবস্থায় আছে, আবার কোনো স্কুলে কেউ নেই। তা হতে পারে না। যেমন কাঁটাবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুদ্দিন স্কুল আছে। সেখানে সুন্দর অবকাঠামো আছে, শিক্ষকেরা খুবই দক্ষ, অঙ্গীকারবদ্ধ, কিন্তু সেখানে ছাত্রসংখ্যা কম। এখানে অভিভাবকদের একটি বড় ভূমিকা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা অনেকে দিল্লি মডেলের কথা বলেছেন। আমাদের মৌলভীবাজারে দিল্লি মডেলের স্কুল আছে। সেখানে পৌর এলাকায় ১৪টি স্কুল আছে। এগুলো বাংলাদেশের সেরা।
‘এতে বোঝা যায়, জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকেরা সম্পৃক্ত হলে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুবই মানসম্পন্ন হতে পারে, কিন্তু সবাই একটি জায়গা, একটি স্কুলকেই বেশি পছন্দ সেখানে যেতে চাচ্ছেন।’