কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণার কল্যাণে বিপুল জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাদের গবেষণায় ধানের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন হয়েছে। সেগুলোকে আমরা দেশের কাজে লাগাচ্ছি।’
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গবেষণা ও প্রকাশনা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান প্রজন্মকে সুদক্ষ কর্মী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করতে হবে। সেই চেষ্টা চলছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তৈরি পোশাক আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলেও এর মূল তুলা আমরা আমদানি করি। চামড়া একটি বড় শিল্প। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট কাজ করছে। এক্ষেত্রে গবেষণা প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসন্ন৷ রোবটিক্সের কারণে আমাদের কর্মীবাহিনী কর্মহীন হয়ে পড়ে কি না তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে।’
গবেষকদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা গবেষণায় নিয়োজিত আছেন তাদের প্রতি আমরা যেন সহানুভূতিশীল হই। আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইন্টার্নিসহ কাজ করার সুযোগ করে দেব।’
এ সময় তিনি গবেষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য শিল্প মালিক ও অ্যালামনাইদের প্রতি আহ্বান জানান।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘কর্মদক্ষ ও যুগোপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরির জন্য একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান হবে এবং এর ভিত্তিতে অবকাঠামোগত মাস্টার প্ল্যান হবে।
‘প্রথমে একাডেমিক গোল সেট করতে হবে। সেখানে গবেষণার বিষয়টি থাকবে এবং তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিষয় হল অবকাঠামো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সমাজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রকাশনা, গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করি সামাজিক চাহিদা নিরূপণ, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের ক্ষেত্রে এই মেলা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। ভর্তিকেন্দ্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা আসতে চায় না।’
ভর্তিকেন্দ্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা নিরসনে তিনি পররাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রলায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।
আলোচনা পর্ব শেষে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন শেষে অতিথিরা মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
মেলায় যা থাকছে
দুই দিনব্যাপী এই মেলায় বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, প্রকাশনা সংস্থা ও গবেষণা কেন্দ্রের শতাধিক স্টল রয়েছে। এসব স্টলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনা ও উদ্ভাবনসহ ৫৫টি গ্রন্থ, ২৬টি বিশেষ জার্নাল, ২১৬টি গবেষণা প্রজেক্ট, ৬২৪টি পোস্টার ও ৮৬টি ফ্লাইয়ার ব্রুশিয়ার স্থান পেয়েছে।
উদ্বোধনী দিনে বিকেল ৩টায় কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পৃথক উপস্থাপনা ছিল।
রোববার সমাপনী দিনে সকাল ১০টায় জীববিজ্ঞান অনুষদ, ফার্মেসি অনুষদ, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদ এবং চারুকলা অনুষদের পৃথক উপস্থাপনা থাকবে।
এছাড়া সব ইনস্টিটিউটের পক্ষে একটি এবং গবেষণা কেন্দ্র/ব্যুরোর পক্ষে একটি উপস্থাপনা থাকবে। বিকেল ৪টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত কবিতা, রচনা ও ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা এবং প্রতিটি জার্নালের বিশেষ সংখ্যার শ্রেষ্ঠ আর্টিক্যাল লেখককে সনদ, ক্রেস্ট ও প্রাইজমানি দেয়া হবে।
এছাড়া প্রতিটি অনুষদ, ইনস্টিটিউট ও সেন্টারের পোস্টার থেকে নির্বাচিত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পোস্টার উপস্থাপনকারীকেও পুরস্কার দেয়া হবে।