বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ

  •    
  • ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:৩৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে গিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খানের ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চেয়েছেন প্রক্টর অফিসের এক কর্মচারী। এ ঘটনায় প্রক্টরকে অভিযুক্ত করে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ওই শিক্ষক। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খানের ব্যক্তিগত তথ্য খুঁজতে বিভাগীয় অফিসে কর্মচারী পাঠিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।

‘গোয়েন্দাগিরির’ এমন অভিযোগ তুলে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন অধ্যাপক তানজীম। বুধবার তিনি বিষয়টি উল্লেখ করে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে তানজীম উদ্দীন খান বলেন, ‘সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নিরাপত্তাসহ আবাসিক হলগুলোকে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলার দাবিতে স্মারকলিপি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে আরও তিনজন শিক্ষকসহ আপনার অফিসে যাই। আপনি স্মারকলিপি গ্রহণ করে খোলামনে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

‘দুঃখজনক হলো, ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ প্রক্টর অফিস থেকে দুজন কর্মচারী আমার বিভাগের অফিসে যান। তারা প্রক্টরের কথা জানিয়ে আমাদের বিভাগের অফিস কর্মকর্তার কাছে আমার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানাসহ ব্যক্তিগত কিছু তথ্যের খোঁজ করেন। যদিও মঙ্গলবার আমাদের অফিস কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, প্রক্টর অফিসের দুজন আমার পারসোনাল ফাইলের খোঁজ করেছিলেন!’

নিন্দাপত্রে তানজীম উদ্দিন খান লেখেন, ‘আমার যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুরক্ষিত থাকার কথা! কোনো তথ্য দরকার হলে রেজিস্ট্রার অফিসই যথেষ্ট নয় কি? কোন ক্ষমতাবলে প্রক্টর একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত তথ্যের খোঁজ এভাবে নিতে চান? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রক্টরের এ রকম কোনো অধিকার কিংবা এখতিয়ার নেই!

‘কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে আমার সঙ্গে সরাসরি বা রেজিস্ট্রার অফিসে যোগাযোগ করা যেত। কিন্তু অত্যন্ত অশিক্ষকসুলভভাবে এবং অন্য কোনো দুরভিসন্ধি নিয়ে এ রকম অগ্রহণযোগ্য কাজটি করা হলো প্রক্টর অফিস থেকে!’

তিনি আরও লেখেন, ‘ঘটনা এখানেই থেমে থাকলেও হতো! ঘটনার দিনই রাত পৌনে ৭টায় আমার স্থায়ী ঠিকানায় একজন পুলিশের এসআই গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে তিনি জানান, ভেরিফিকেশনের জন্য এসেছেন। আমি খবর পেয়ে ফোনে কথা বললে তিনি জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একটা তালিকা করা হচ্ছে।

‘সবকিছু মিলিয়ে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান, আত্মমর্যাদা ও স্বকীয়তা বলতে আর অবশিষ্ট কিছু আছে কি না জানি না! প্রক্টর উদ্ভট এই কাণ্ডের মধ্য দিয়ে অন্তত তিনটি কাজ করেছেন। প্রথমত, তিনি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে শিক্ষকের তথ্যের জন্য কর্মচারী পাঠিয়েছেন; দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ভঙ্গ করেছেন এবং তৃতীয়ত, মানসিক হয়রানি করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ওনার সম্পর্কে শুধু একটা তথ্য জানতে আমার অফিসের একজন কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছেন। এরপর তিনি এই ব্যাপারে বিভাগের দপ্তর এবং চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ করেছেন।

‘সেই কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তিগত ফাইল খোঁজেননি। এরপর সেখান থেকে বলা হয়েছে তথ্যটি নেই। এরপর উনি আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে তখনই আমি জানতে পারে যে উনি সেখানে গিয়েছেন। এরপর আমি ওনাকে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসতে বলেছি। তবে আমার সেই কর্মকর্তা সৌজন্য রক্ষা করে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, নিয়মমাফিক, বিধি মোতাবেক চেয়ারম্যানের কাছে তথ্যের জন্য অনুরোধ করেছেন।’

তথ্যটি কী জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘এটা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।’

প্রক্টর বলেন, ‘ব্যক্তিগত ফাইল খোঁজার কথা বলে অধ্যাপক তানজীম শব্দ-সন্ত্রাস করছেন এবং কল্পিত ও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সহানুভূতি নেয়ার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ওনার সত্য কথা লিখার সৎসাহস থাকবে বলে আমি আশা করি।’

এদিকে প্রক্টর অধ্যাপক তানজীমের বক্তব্যকে শব্দ-সন্ত্রাস ও বাক-সন্ত্রাস আখ্যা দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক তানজীম।

প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নিন্দা

কর্মচারী পাঠিয়ে একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত তথ্য খোঁজার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে প্রক্টর অফিস কর্তৃক অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খানের ব্যক্তিগত ফাইল তল্লাশি আইন ভঙ্গের শামিল। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার বিচার করতে হবে।

‘দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বিশ্ববিদ্যালয়ও আজ সারা দেশে চলমান স্বৈরাচারী পরিস্থিতির বাইরে নয়। ভিন্নমত দমনে শাসক দল আওয়ামী লীগ যেমন বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, একইভাবে ভিন্নমত অবলম্বনকারী একজন শিক্ষকের প্রতি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে প্রক্টরের এহেন আচরণ আমাদের ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করে। একই সঙ্গে একজন শিক্ষক হয়ে আরেকজন শিক্ষকের প্রতি এ ধরনের উদ্ভট ক্ষমতার চর্চা দেখে আমরা ভীষণভাবে লজ্জিত।’

ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের রক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। একজন শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করত। এমনকি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তারা প্রতিবাদী শিক্ষকদের হত্যাও করেছিল।

বিবৃতিতে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং দেশের মানুষের গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষায় দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

এ বিভাগের আরো খবর