জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগ প্রথমবারের মতো ‘ন্যাশনাল সেমিনার অন বায়োটেকনোলজি ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-২০২২’ শীর্ষক একটি জাতীয় সেমিনার করেছে।
দেশের ২০ বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি গবেষণা সংস্থা থেকে প্রায় ৩০০ জন গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সেমিনারে আয়োজিত ওয়ার্কশপ, রচনা ও পোস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলা সেমিনারের মূল লক্ষ্য ছিল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরা এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের এক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মেহেদী হাসান খান।
তিনি বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থান এবং কীভাবে বায়োটেকনোলজিস্টদেরকে জাতীয় উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ এবং লাইফ সাইন্স অ্যান্ড আর্থ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান খন্দকার।
সেমিনারের কি-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত, ইউজিসি অধ্যাপক ড. হাসিনা খান।
সেমিনার আয়জন কমিটির সেক্রেটারি মো. মেহেদী হাসান সোহাগের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ছিলেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. দিলারা ইসলাম শরীফ।
সেমিনারে ইউজিসি প্রফেসর ড. হাসিনা খান শিক্ষার্থীদের সাথে পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং এবং টেকসই উন্নয়নে পাট কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. হাসিনা খান বলেন, ‘আধুনিক জিনোমিক্স যুগের জিনোমিক্স ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে প্রতিকূল পরিবেশ এবং রোগ প্রতিরোধী উন্নত পাটের জাত দেশের টেকসই উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে। পাট শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের সাধনার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি ফসল নয় বরং এই সোনালী ফসল আমাদের জাতীয়তাকে প্রতিনিধিত্ব করে।’
পরবর্তীতে টেকনিক্যাল সেশনে বক্তব্য রাখেন আইসিডিডিআর’বির গবেষক এবং ভাইরোলজি ল্যাব অ্যান্ড জিনোমিক সেন্টারের প্রধান মুস্তাফিজুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ।
ড. রহমান বলেন, ‘জিন ও জিনোমিক্স আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জিনোমিক্স ডেটাগুলো জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় অর্থবহ ভূমিকা পালন করে।’
ড. আজাদ তার বক্তব্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জৈব সম্পদ প্রযুক্তির সুযোগ এবং সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী দিদারুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীকে দীর্ঘ মেয়াদে বাসযোগ্য করে রাখার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। আর এজন্যই শিক্ষার্থীদের মাঝে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সেমিনারটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ওপেন বুক এক্সামের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
জাতীয় পর্যায়ের সেমিনারটি আয়োজনে আর্থিক সহায়তা করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং টাইটেল স্পন্সর ছিল অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড।
এ ছাড়া আর্থিক সহায়তা দিয়েছে হামিম গ্রুপ লিমিটেড। অন্যান্য সহযোগী স্পন্সর হিসেবে ছিলেন এলআরএন, এসকো, ন্যানোটেক, প্যারাডাইস, এসএমআই, ওএমসি, আইল্যান্ড সিকিউরিটিস।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কুইজ, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও প্রাইজমানি বিতরণ করা হয়।