ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। কমিয়ে আনা হয়েছে বিভিন্ন পদে আবেদন ফির পরিমাণ। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে আবেদন ফি পাঁচ হাজার থেকে কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। একইভাবে কমানো হয়েছে অন্যান্য পদে আবেদনের ফি-ও।
মঙ্গলবার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওয়েবসাইটে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফাওজিয়া রাশেদী সই করা এক বিজ্ঞপিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এক নম্বর অর্থাৎ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন ফি পাঁচ হাজার থেকে কমিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রভাষক ও সহকারী প্রোগ্রামার পদে আগের নির্ধারিত আবেদন ফি তিন হাজার থেকে কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা।
প্রদর্শক পদে আবেদন ফি দুই হাজার থেকে কমিয়ে দেড় হাজার, সহকারী শিক্ষক ও নার্স পদে দেড় হাজার থেকে কমিয়ে এক হাজার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে এক হাজার ৮০০ থেকে কমিয়ে শুধু ৮০০ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া ল্যাব সহকারী, প্লাম্বার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে আবেদন ফি এক হাজার থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৭০০ টাকা।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৪টি ক্যাটাগরিতে শিক্ষকসহ ১০০ জনবল নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে ৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ওয়েবসসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি দুটি পত্রিকাতেও প্রকাশ করা হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি।
বিজ্ঞপ্তিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে আবেদনের ফি ধরা হয় এক হাজার টাকা। আর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনের ফি উল্লেখ করা হয় পাঁচ হাজার টাকা।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পরই আবেদন ফি হিসেবে এতো বেশি পরিমাণ টাকা উল্লেখ করা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
নিয়োগ ফি এত বেশি কেন তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা। সেখানে অধ্যক্ষের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে অপরিচিত কাউকে কিছু বলবেন না জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
ফি নিয়ে যা বলছে কর্তৃপক্ষ
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন ফি বেশি উল্লেখ করা হয়েছে- এমনটা উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ন্যূনতম দুটি জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া এবং বিজ্ঞপ্তির বিল পরিশোধ করতে হয়। একই সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিটি ও উপ-কমিটি করতে হয়। ওই কমিটিগুলোতে মাউশির প্রতিনিধি ও বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ এবং উচ্চ পদমর্যাদার ব্যক্তিবর্গ সংযুক্ত থাকেন। কমিটির নাম ‘পদভিত্তিক যাচাই-বাছাই কমিটি ও নিয়োগ কমিটি’।
তাতে আরও বলা হয়- জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, কোডিং, ডিকোডিং, কক্ষ পরিদর্শন, নিরীক্ষণ, ফলাফল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কার্যক্রমে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োজিত থাকে। তাদের প্রত্যেককে যৌক্তিক হারে সম্মানী প্রদান ও আপ্যায়ন করতে হয়।
এছাড়া পরীক্ষা গ্রহণের দিন শৃঙ্খলা বিধানে নিয়োজিত থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিএনসিসি, স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট ও গার্ল গাইডসের সদস্যরা।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদে আবেদন ফি কমিয়েছে
যেহেতু পরীক্ষার দিনই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, নিরীক্ষণ ও ফলাফল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় সেহেতু সকলের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থাও রাখতে হয়।
বিগত সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল কম এবং তাদের কাছ থেকে আবেদন ফি বাবদ গৃহীত অর্থের চেয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যয় ছিল বেশি, যা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।
এভাবে ভর্তুকি দিতে হলে তা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত টিউশন ফির ওপর চাপ পড়ে। উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন ফি আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।