জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) চুরির চেষ্টার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান রনি সোমবার কোতোয়ালি থানায় জিডিটি করেন।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক নাহিদুল ইসলাম।
জিডিতে বলা হয়, গত ৮ অক্টোবর সকাল ৬টার দিকে রেজিস্ট্রার সাউদর রহমান খবর পান, নতুন একাডেমিক ভবন থেকে এক ব্যক্তি বস্তায় করে কিছু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নিরাপত্তাকর্মীরা ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায়। সে বস্তায় দশটি পানির কল, একটি তালা, একটি গাড়ির জগ, একটি মোটর, এক জোড়া স্যান্ডেল ও একটি লোহার রড জাতীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায়।
পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর পর কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক পর্যায়ে জিডি করার পর মামলা করার নির্দেশ দেয়।
তদন্ত কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরির চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের একিট আলমারির দরজা ভেয়ে চুরি হয়েছে অনেক যন্ত্রাংশ। ছবি: নিউজবাংলা
অ্যাকাডেমিক ভবন ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর, ছাত্রী কমনরুম ও শিক্ষক সমিতির ওয়াশরুমে চুরির চেষ্টা চালানো হয়েছে।
দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের যন্ত্রাংশের আলমারির দরজা ভাঙা। পাশের দুটি সিসি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরানো ও একটি খুলে ঝুলে আছে। এ ছাড়া ছাত্রী কমনরুমের পানির স্টিলের কল খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কমনরুমের তালা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। শিক্ষক সমিতির ওয়াশরুমের গ্রিল কাটা পড়ে রয়েছে, বেসিন থেকে শুরু করে সবকটি পানির কল পাইপসহ নেয়ার চেষ্টা করা হয়।
চুরির পর টের পেয়ে ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময় একজনকে ধরতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীকে ছুরি মেরে পালিয়ে যায় একজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সীমানাপ্রাচীরের বেহাল দশাতেই দফায় দফায় চুরির ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করছেন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ২০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলে কাচের দরজা ভেঙে চুরি করা হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ও একটি মামলা হয়েছিল। তবে এ চুরির এখনো কোনো হদিস মেলেনি। দেয়া হয়নি তদন্ত প্রতিবেদনও। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেই ঘটনায় পাওয়া যায়নি সিসিটিভি ফুটেজ।
মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে একই কায়দায় পাশাপাশি স্থানে আবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ক্যাম্পাসে বারবার চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরপ্রধানরা নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলাকে দুষছেন। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাব্যবস্থাকে জোরদারের দাবি জানান তারা।
চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের প্রশাসক সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘চুরির ঘটনা শুনে সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছি। গাড়ির যন্ত্রাংশের আলমারি ভাঙা পেয়েছি। সিসি ক্যামেরা উল্টানো। আরেকটি সোজা আছে। সেটির ফুটেজ দেখলে বোঝা যাবে হয়তো। বিষয়টি উপাচার্যকে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ঘটনা নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে শুনে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছি। এ ব্যাপারে উপাচার্যের সঙ্গে আমাদের মিটিংও হয়েছে। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছেন।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাও বলেছি। এমন ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না হয় সে ব্যাপারে সচেতন হতে বলেছি।’