বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লেখাপড়ার চাপে বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা

  •    
  • ৮ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:৫৩

চলতি বছরের ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যা করেছে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। এর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭, স্কুলের ২১৯, মাদ্রাসার ৪৪ ও কলেজ পড়ুয়া ৮৪ জন। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৪২ ও পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন।

করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অ্যাকাডেমিক চাপ প্রভাব বেড়েছে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। এর প্রভাবে বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা।

‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। আঁচল ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে শনিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যা করেছে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। এর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন, স্কুলের ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন ও কলেজ পড়ুয়া ৮৪ জন। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৪২ ও পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন।

করোনা-পরবর্তী সময়ে বেড়ে যাওয়া আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে পরিচালিত জরিপে অ্যাকাডেমিক চাপ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার জন্য কতটুকু দায়ী এবং অন্য কী কী কারণ রয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধরন বিবেচনায় জরিপে মোট অংশগ্রহণকারীদের ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ২ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে।

এবারের জরিপটিতে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ১৬৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মাঝে পুরুষ শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষার্থী ছিলেন যথাক্রমে ৪৩ দশমিক ৯ ও ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ।

জরিপে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা করোনা-পরবর্তী অ্যাকাডেমিক চাপের কারণে নানামুখী মানসিক ও গঠনমূলক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

লেখাপড়াকেন্দ্রিক চাপের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ জানান যে আগের তুলনায় করোনা-পরবর্তী সময়ে লেখাপড়ায় তাদের মনোযোগ কমে গেছে। ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের ঘন ঘন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে তারা খাপ খাওয়াতে পারছেন না। পরীক্ষার সময়ের চেয়ে সিলেবাসের আধিক্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ জানিয়েছেন, স্বল্প সময়ে এত বড় কোর্স শেষ করতে গিয়ে তারা পড়া বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ জানান, লেখাপড়ার চাপের জন্য তারা পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না, যা তাদের মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মোট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো

করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের জীবনে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে তা হলো লেখাপড়ার অতিরিক্ত চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারা। ৩১ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা একডেমিক চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। নিজের বা পারিবারিক অর্থনৈতিক সংকটের চাপে আছেন ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

ভালো চাকরি না পাওয়া নিয়ে চাপ বোধ করছেন ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। সহপাঠীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগছেন ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

এছাড়া পার্টনারের সঙ্গে মনোমালিন্য, বিয়ে নিয়ে অযাচিত চাপ এবং পারিবারিক ঝগড়া বিবাদজনিত চাপে আছেন ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা এই চাপের কারণে আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছেন।

আত্মহত্যার ভাবনা নিয়ে অশনি সংকেত

করোনা-পরবর্তী সময়ে ১৬৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জন বা ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আত্মহত্যার পথে হেঁটেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছেন বলে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। করোনা-পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করার চিন্তা মাথায় এসেছে ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর।

ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তি বাড়াচ্ছে মানসিক সমস্যা

ডিজিটাল ডিভাইস যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, আমাদের জীবনকে সহজ করে তুললেও এর ওপর অতিরিক্ত আসক্তি ও নির্ভরতা শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন ৭০ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার হার বেড়েছে

ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন যেমন- হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যাওয়া, নিজেকে গুটিয়ে নেয়া, বহির্মুখী (এক্সট্রোভার্ট) কিংবা আত্মকেন্দ্রিক (ইন্ট্রোভার্ট) হয়ে ওঠার প্রবণতাও শিক্ষাজীবনকে অনেকাংশে প্রভাবিত করছে বলে জানিয়েছেন ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী।

অভিভাবকের অযাচিত চাপ

সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকের স্বপ্ন বা প্রত্যাশার চাপ ৫৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন পরিবার থেকে তৈরি হওয়া অযাচিত চাপ তাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে তুলছে।

অ্যাকাডেমিক চাপে নাজেহাল ৭৭ দশমিক ০১ শতাংশ

করোনা-পরবর্তী বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত লেখাপড়া ও কম সময় শ্রেণিকক্ষে পাঠক্রম শেষ করার জন্য এক ধরনের চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ৭৭ দশমিক ০১ শতাংশ শিক্ষার্থীর এই চাপের সম্মুখীন।

ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা

লেখাপড়া শেষ করে সব শিক্ষার্থীই চায় ভালো চাকরি করবে। করোনার প্রভাবে তৈরি হওয়া বিভিন্ন কারণ তাদের প্রত্যাশায় ছেদ টানতে বাধ্য করেছে। ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন চাকরি ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তার কারণে তারা মানসিক চাপে আছেন।

পরীক্ষার ফল ভালো না হওয়ার ভয়

শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সেমিস্টার বা পাঠক্রম ইস্যুতেও এক ধরনের শঙ্কা নিয়ে এগুচ্ছে। পরীক্ষার ফল ভালো না হওয়ার ভয়ে থাকছেন ১২৭৪ জন বা ৭৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

সেশনজটের শিকার ৬৩ দশমিক ৪১ শতাংশ

জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৬৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বিভিন্ন মেয়াদে সেশনজটের শিকার হয়েছেন।

মনের কথা বলার মতো শিক্ষক পান না

শিক্ষকদের সঙ্গে নিজের সমস্যা শেয়ার করা যায় কি না জানতে চাওয়া হলে ৭৪ দশমিক ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা নিজেদের মানসিক সমস্যাগুলো শেয়ার করার এত শিক্ষক পান না। মাত্র ২৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মন খুলে কথা বলার জন্য শিক্ষকদেরকে পাশে পান।

আবার শিক্ষার পরিবেশে অসন্তোষও মানসিক চাপের কারণ। ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন লেখাপড়ার জন্য তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিবেশ সহায়ক নয়। এতে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এ বিভাগের আরো খবর