কুড়িগ্রামে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদ দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিযোগ বেশ পুরোনো। এ নিয়ে তদন্ত করার পর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হলেও তার বাস্তবায়ন নেই। বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন জাল সনদধারীরা। সম্প্রতিক এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে বিষয়টি।
কুড়িগ্রামে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে চলছে তোলপাড়। এতে জড়িত অভিযোগে বেশ কয়েকজন শিক্ষক গ্রেপ্তার হওয়ায় শিক্ষকদের অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়াসহ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাল সনদ দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ নিয়ে তদন্ত হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। গত বছর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এনটিআরসিএ ১০৫ জন শিক্ষকের সনদের সঠিকতার তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে ৭৭ জন শিক্ষকের জাল সনদের তথ্য উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। জাল সনদধারীরা বেতন-ভাতা নিয়মিত তুলে আসছেন।
এসএসসি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাদের একজন হলেন ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক জোবাইর হোসেন।
ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের স্বাক্ষরিত ২৭(৪৬৮)/২০১৩ স্মারকে ২০১৩ সালের ১৫ জুন অস্থায়ীভাবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই শিক্ষকের এমপিও করার তথ্য পাঠানো হলে ধরা পড়ে তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি ভুয়া।
এনটিআরসিএর এক চিঠিতে বলা হয়, জোবাইর হোসাইন ২০১২ সালে অষ্টম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় রোল-৩২১১০৩৩৫ নম্বরে ফরিদপুর জেলার সাধারণ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক কাওছার খান বলে তথ্য পাওয়া যায়।
জোবাইরের এনটিআরসির সনদটি জাল ও ভুয়া হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় স্কুলকে। তবে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের হোতা সন্দেহে আটক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বিষয়টি গোপন রাখেন।
স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান রোজেন বলেন, ‘শিক্ষক জোবাইর হোসেনের এনটিআরসি সনদ জাল কি না আমি জানি না।’
একই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ টি এম খলিলুর রহমানও বলেন, ‘জোবাইর হোসেনের এনটিআরসি সনদ জাল কি না আমার জানা নেই। এই বিষয়ে কোনো চিঠি এসেছিল কি না, সে বিষয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক কাউকে বলেওনি।’
ফুলবাড়ী উপজেলার সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক নাসরিন সুলতানা কম্পিউটারের শিক্ষকের এনটিআরসির সনদটিও ভুয়া। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেও তা কার্যকর হয়নি।
এনটিআরসির সহকারী পরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষা মান) লোকমান হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ১০৫ জনের মধ্যে ৭৭ জন শিক্ষকের সনদ ভুয়া। এর মধ্যে ১০৩ নম্বর তালিকায় নাসরিন সুলতানার নাম ছিল। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তার বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি দেন ফুলবাড়ি ইউএনও সুমন দাস।
নাসরিন সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এনটিআরসি সনদটি পেয়েছি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২০০৮-০৯ সালে। অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি সনদটি ভুয়া। তবে এই বিষয়ে শিক্ষা অফিস বা মাদ্রাসা সুপারের কোনো লিখিত নির্দেশনা পাইনি।’
ফুলবাড়ি ইউএনও সুমন দাস বলেন, ‘নাসরিন সুলতানার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জাল প্রমাণিত হয়েছে। তার বেতন-ভাতা বন্ধের জন্য সুপারিশ করে জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য দেয়া হয়েছে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, ‘জাল সনদধারীদের বিষয়ে এনটিআরসিএ থেকে সনদ যাচাইয়ের কোনো নির্দেশনা আসেনি। তালিকা পেলে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করব।’