গাজীপুরের আলোচিত বেলায়েত শেখ অবশেষে স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের শিক্ষার্থী হলেন। তিনি বেসরকারি এই বিদ্যায়তনে জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর পর পর চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন ৫৫ বছর বয়সী অদম্য এই বিদ্যানুরাগী।
রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একই বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দূরত্ব ও মায়ের আপত্তির কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন।
বেলায়েত বলেন, ‘রাজশাহীতে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে মায়ের আপত্তি ছিল। তাছাড়া গাজীপুর থেকে রাজশাহীর দূরত্বও অনেক। এখানে ভর্তি হওয়ায় এখন বাড়ি থেকেই ঢাকায় ক্লাস করতে পারব।’
স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বেলায়েতের ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসরিন আক্তার। তিনি জানান, বেলায়েত ২৭ সেপ্টেম্বর এই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
নাসরিন আক্তার বলেন, ‘বেলায়েতের জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ ও সাধনা আমাদের অভিভূত করেছে। তার এই অগ্রযাত্রায় অংশ হতে পারায় আমাদের ভালো লাগছে।’
বেলায়েত ১৯৮৩ সালে প্রথমবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেও টাকার অভাবে সেবার নিবন্ধন করতে পারেননি। ১৯৮৮ সালে তিনি আবারও এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে বছর সারা দেশে বন্যার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি।
এর কয়েক মাস পর তিনি একজন আলোকচিত্রী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ‘দৈনিক করতোয়া’র গাজীপুর জেলার শ্রীপুর প্রতিনিধি।
কর্মজীবন শুরুর পর বেলায়েত আর পড়ালেখা না করার সিদ্ধান্ত নেন। ছোট ভাইদের মাধ্যমে নিজের অধরা স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বর্তমানে তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
অদম্য বেলায়েত অবশেষে ২০১৯ সালে এসএসসি ও ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যে বছর তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দেন, একই বছর তার ছোট ছেলেও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
আশপাশের মানুষের উপহাস আর বিদ্রূপ উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া বেলায়েতের স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার। সে অনুসারে চলতি বছরের ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু সুযোগ পাননি।
পরে একে একে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন তিনি। সবশেষে তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হলেন।