রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ইডেন কলেজ অডিটোরিয়ামের সামনে এই সংঘর্ষ ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে দুজনকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন ইডেন কলেজের শিক্ষক নার্গিস আক্তার। তারা হলেন ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও যুগ্ম সম্পাদক রিতু আক্তার।
এদিকে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস থেকে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকে সরিয়ে নিয়েছে কলেজ প্রশাসন। রোববার রাত ৮টা ২০ মিনিটে তাকে কলেজের ৩ নম্বর গেট দিয়ে বের করে নেয়া হয়।
ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকে রোববার রাতে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: নিউজবাংলা
রাজিয়া সুলতানাকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করেছে বিরোধীপক্ষ। তারা বলছে, এর মধ্য দিয়ে কলেজ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
এর আগে সন্ধ্যায় হওয়া হামলার পর পুলিশ প্রটোকলে সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিক্ষক নার্গিস আক্তার বলেন, ‘আহত যে দুজনকে এখানে নিয়ে এসেছি তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। চেয়ার ও লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করা ছাড়াও চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হলেও তাদের ঢাকা মেডিক্যালে আনা সম্ভব হয়নি।’
শনি থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনা নিয়ে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন। কলেজ অডিটোরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলন শুরুর পর ছাত্রলীগের দুই পক্ষে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে তা হামলা-পাল্টা হামলায় গড়ায়। দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে চেয়ার ছুড়ে মারতে থাকে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হন।
এ বিষয়ে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা পারভিন চৌধুরী বলেন, ‘রিভা ও রাজিয়া সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছেন। কিন্তু তাদের সেই সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কেউ ছিল না। পরে আমরা সেই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের বসাতে গেলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের তিনজন আহত হয়েছেন। তারা হলেন শেখ সানজিদা, সুষ্মিতা ও স্বর্ণালি।’
সানজিদা বলেন, ‘ছাত্রলীগের এই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আমরা ক্যাম্পাসে চাই না। রিভা চলে গেছেন। রাজিয়া এখনও আছেন। আমরা চাই তিনিও সসম্মানে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাবেন।’
এক প্রশ্নের উত্তরে সানজিদা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে এখনও কেউ যোগাযোগ করেননি। আমরা এই তদন্ত কমিটি মানি না।’
রিভা-রাজিয়া পক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
এর আগে হামলার শিকার হয়ে তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, ‘আমরা নেতৃত্বে আসার পর থেকে নিয়মিত চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার জন্য। কিন্তু কমিটি থেকে সেন্ট্রালে পদ পাওয়া কয়েকজনের ইন্ধনে এসব করা হচ্ছে।’
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিরোধীপক্ষের নেত্রীরা রোববার রাতে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: নিউজবাংলা
বিরোধীপক্ষের নেত্রীরা যা বললেন
হামলা-সংঘর্ষে আহত হয়ে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস থেকে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রিভাকে নেয়া হয়েছে হাসপাতালে। আর সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকেও পুলিশের সহায়তায় ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে গেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রিভা ও রাজিয়া ক্যাম্পাসছাড়া হওয়ার পর রাতে কলেজ ছাত্রলীগের বিরোধীপক্ষের নেত্রীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। তাদের পক্ষে কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি জেবুন্নাহার শীলা বলেন, ‘আজ থেকে ইডেন কলেজ কলঙ্কমুক্ত। ছাত্রী নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসছাড়া হওয়ায় আমরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। কারণ এ রকম অন্যায়কারী চাঁদাবাজ সভাপতি-সেক্রেটারি আমরা কখনই চাই না।’
আরেক সহসভাপতি সুষ্মিতা বাড়ৈ বলেন, ‘এই ইডেন কলেজ রিভা-রাজিয়ার ঘাঁটি নয়। এটা শেখ হাসিনার ঘাঁটি। এখানে রিভা-রাজিয়ার স্থান হবে না।
‘আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আমাদের যে আট দাবি ছিল সেগুলোর ব্যাপারে রিভা ও রাজিয়াকে জবাব দিতে হবে। তারপর বিচার-বিশ্লেষণ করে বলতে পারব যে তাদের আমরা ক্যাম্পাসে আনব কি আনব না।’
এরপর কলেজ ক্যাম্পাসে উল্লাস প্রকাশ করে স্লোগান দেন বিরোধীপক্ষের ছাত্রলীগ নেত্রীরা। এ সময় তারা রিভা ও রাজিয়ার বিরুদ্ধেও নানা স্লোগান দেন।