বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ভূরুঙ্গামারীর ইউএনওর অবহেলায়’ এসএসসির প্রশ্ন ফাঁস

  •    
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৪:৩৪

ভূরুঙ্গামারী ‍উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউএনও যদি শুরুতেই তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতেন, তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটার সম্ভাবনা ছিল না। এসএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষাকে গুরুত্ব না দেয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের দায় ইউএনও এড়াতে পারেন না।’

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মার গাফিলতির কারণেই চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর পাঁচ-সাত দিন আগে কেন্দ্র সচিব বা তার প্রতিনিধি এবং ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে ট্রাংকে রক্ষিত প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সঙ্গে প্রশ্নপত্রের চাহিদা সঠিকভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। কোনো গরমিল থাকলে সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে লিখিতভাবে জানাতেও বলা হয়।

‘...ইউএনও সেই কাজ না করে এক-দুই দিনের মধ্যে একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে প্রশ্নপত্র সর্টিং করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। একজন কর্মকর্তার পক্ষে হাজার হাজার প্রশ্নপত্র এক-দুই দিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই, কাগজে স্বাক্ষর করা এবং নজরদারি-হিসাব করে প্রতিবেদন দেয়া প্রায় অসম্ভব। আর এই সুযোগে অসাধু কিছু শিক্ষক প্রশ্নপত্র কৌশলে বের করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনও যদি শুরুতেই তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতেন, তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটার সম্ভাবনা ছিল না। এসএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষাকে গুরুত্ব না দেয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের দায় ইউএনও এড়াতে পারেন না।’

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চলতি এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সেটের প্যাকেট সর্টিং এবং যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব ছিল ইউএনও দীপক কুমারের। তার সই করা একটি পত্রে গত ১১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য গোপনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমানকে বলা হয়।

এতে বলা হয়, ভূরুঙ্গামারী থানায় প্রশ্নপত্র ও অন্য গোপনীয় কাগজপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। সিলগালাকৃত এসব প্রশ্নপত্র বিবরণী মোতাবেক ঠিক আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

পত্রে আরও বলা হয়, পরীক্ষার সময়সূচি অবশ্যই খামের ওপর লিখতে হবে।

ভূরুঙ্গামারী থানার ওসিসহ উপজেলার ছয়টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবদেরও এই পত্রের অনুলিপি দেয়া হয়।

একই তারিখে ইউএনওর স্বাক্ষরিত আরও একটি অফিস আদেশে ভূরুঙ্গামারী পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে কৃষি কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ ও সমবায় কর্মকর্তা নুর কুতুবুল আলম, নেহাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মৎস্য কর্মকর্তা আদম মালিক চৌধুরী ও পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রায়হান হক, সোনাহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ, সোনাহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর আতিকুর রহমান ও সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম, ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা কেন্দ্রে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, দিয়াডাঙ্গা আইডিয়াল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সহকারী প্রোগ্রামার রুবেল সরকার এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মুখলেছুর রহমানকে ট্যাগ অফিসার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।

তারা পরীক্ষার দিনগুলোতে থানা থেকে নির্ধারিত প্রশ্নপত্র উত্তোলন নিশ্চিত এবং পরীক্ষা চলাকালীন সার্বক্ষণিক কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা গ্রহণ করবেন বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়।

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ভূরুঙ্গামারী থানায় প্রশ্ন যাচাই-বাছাইয়ের সময় নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানের যোগসাজশে বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের ভেতর বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ঢুকিয়ে নেন। একই সঙ্গে প্যাকেট সিলগালা করেন। ওই সময় তারা গণিত, কৃষিবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রও নিয়ে নেন। এ ছাড়া মোবাইলে জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতের প্রশ্নের ছবি তুলে নেন।

সিলগালা করা প্রশ্নপত্রের ওই প্যাকেটের ওপর স্বাক্ষর করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও বেরিয়ে আসে, ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার দিন যথানিয়মে থানা থেকে বাংলা প্রথম পত্রের প্যাকেট এনে তা থেকে ওই প্রশ্নগুলোর খামটি সরিয়ে ফেলেন কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমানসহ তার সহযোগীরা। কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ কর্মকর্তা মুখলেছুর রহমানকে বোর্ডের দেয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নপত্রের খাম গণনা করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি।

পরে এই প্রশ্নগুলোর কয়েকটি হাতে লেখা উত্তরপত্র তৈরি করে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া উত্তরপত্রের সঙ্গে পরের দিন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিলে যায়। আর এসব উত্তরপত্র অনেকেই মোবাইলের মাধ্যমে গোপনে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছে বিক্রি করেন।

এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছে কোনো চিঠি নেই। প্রশ্নপত্রে আমরা শুধু এসকর্ট (নিরাপত্তা) দিয়ে থাকি। বাকিটা সভাপতি (ইউএনও) এবং তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা করেন। সিলগালা রাখা না রাখা তাদের দায়িত্ব।’

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি বর্তমানে হসপিটালাইজড আছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

এসব বিষয়ে জানতে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মাকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিধি মোতাবেক ইউএনওকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তার পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর