ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হাসনাত আবদুল্লাহর অনশন ভাঙিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে ডাবের পানি পান করিয়ে এই শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙান তিনি। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
প্রশাসনিক ভবনে হয়রানি বন্ধসহ আট দাবি নিয়ে গত রোববার থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর মঙ্গলবার দুপুরে অনশনে বসেন হাসনাত। মধ্যরাত থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
হাসনাতের অনশন ভাঙিয়ে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এখন থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো কাজে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে আসতে হবে না। তাদের সেবা তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।
‘তাদের সব কাজ হল এবং বিভাগীয় অফিসে সম্পাদন করতে পারবে। সেখানে যদি কেউ অসহযোগী আচরণরর শিকার হয় তাহলে সেখানে অভিযোগ সেল আছে। সেখানে তারা জমা দিতে পারবে।’
উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কেন তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন অফিসে অফিসে ধরনা দেবে? যেগুলো নিয়মিত কাজ সেগুলো তারা তাদের হল অফিস এবং বিভাগীয় অফিস থেকে পাবে। তবে শিক্ষার্থীদের ভুলের কারণে কোনো কাজ সৃষ্টি হলে সেজন্য তাদের আসতে হবে। এছাড়া তাদের আসতে হবে না। এজন্য আমরা কয়েকজন কর্মচার যুক্ত করেছি।’
তবে এই কাজটি কীভাবে হবে সেটির কোনো রূপরেখা উপাচার্য বলেনননি।
শিক্ষার্থীরা হাত তালি দিয়ে উপাচার্যের বক্তব্যকে স্বাগত জানান। পরে হাসনাতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্স করে হাসাপাতালে পাঠানো হয়।
হাসনাতের আন্দোলন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে হয়রানি বন্ধে ৮ দফা দাবি নিয়ে গত রোববার ওই ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হাসনাত আবদুল্লাহ।
এসব দাবির পক্ষে হাসনাত ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া তিনি সেখানে একটি অভিযোগ বক্স স্থাপন করেন। যাদের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং নিয়ে অভিযোগ আছে তারা সেখানে অভিযোগ লিখে জমা দেন।
হাসনাত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। তবে মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস না পেয়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
এদিন বেলা আড়াইটার দিকে আমরণ অনশনে বসে হাসনাত। পরে মধ্যরাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল টিম প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করে হাসপাতালে নিতে চাইলে তিনি যাননি।
এক পর্যায়ে হাসনাতের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন তারা।
পরে কার্যালয় থেকে গিয়ে শিক্ষার্থী হাসনাতের অনশন ভাঙান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
হাসনাতের দাবি
আট দাবি হলো:
১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিতে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন।
২. প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটালাইজ করা।
৩. নিরাপত্তা এবং হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে প্রতিকক্ষে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন।
৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন।
৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত এবং প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনের সংস্কার।
৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারি, মানসিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করা।
৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত, ব্যাবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত না থাকা।
৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচার পরিবেশবান্ধব করা।