ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনে হয়রানি বন্ধের জন্য আট দাবি নিয়ে অনশনে বসা শিক্ষার্থী হাসনাত আবদুল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে মধ্যরাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।
হাসনাতের আন্দোলনে সঙ্গী হয়েছেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার অনশন ভাঙানো ও তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। হাসনাত বলেছেন, দাবি না পূরণ হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। পরে সকালে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ড. হাফেজা জামানও।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মোহাম্মদ আব্দুল মুহিতের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে এসে হাসনাতকে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করলে তিনি অনশন ভাঙবেন না বলে জানান।
হাসনাতের দাবি, তার দাবির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কোনো লিখিত স্টেটমেন্ট না দেয়া পর্যন্ত এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন না করা পর্যন্ত তিনি অনশন ভাঙবেন না।
হাসনাতের অনশনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রিফাত রশীদ বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হাসনাত ভাইয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। কিন্তু তবুও উনি নিজ অবস্থান থেকে সরে যাননি।
‘অ্যাম্বুলেন্স এলেও উনি হসপিটালে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাধ্য হয়ে শেষমেশ আমাদের ডাক্তার ডেকে আনতে হয়।’
এরপর সকালে আসা সহকারী প্রক্টররা অনশন ভাঙাতে এলে হাসনাত আবদুল্লাহ তিনি তার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না বলে জানান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ডিজিএফআই থেকে আমার বাবা-মাকে হুমকি দেওয়ানো হচ্ছে। তারা বলছে, আমি নাকি হিজবুত তাহরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
এ সময় সহকারী প্রক্টররা তাকে ফের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করলে এই অনুরোধে সায় না দিলে শিক্ষকরা চলে যান।
হাসনাতের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
হাসনাতের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বুধবার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
মানববন্ধন শেষে তারা উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর তারা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়া শুরু করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষার্থী যখন অনশনে ভিসি কেন এসি রুমে’, ‘ছাত্র যখন অনশনে ভিসি কেন লাঞ্চ করে’, ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করো, করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। পরে সহকারী প্রক্টর ড. মো. আব্দুল মুহিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের শান্ত হতে বলেন এবং মাইক বন্ধ করতে বলেন।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সামনে এসে এসব দাবি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন সেটির রূপরেখা না বললে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে যাবেন না। পরে সহকারী প্রক্টর শিক্ষার্থীদের এই দাবি উপাচার্যকে জানাবেন বলে ভেতরে চলে যান।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকেও শিক্ষার্থীরা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনেই অনশন করছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
ছাত্রলীগের অবস্থান
হাসনাতের অনশনের ব্যাপারে অবস্থান জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সুস্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি।
তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ ব্যাপারে সব সময় সচেষ্ট থাকবে।
হাসনাতের আন্দোলন ও ৮ দাবি
মঙ্গলবার সকালে তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন হাসনাত। এদিন উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে দাবি পূরণের আশ্বাস না পাওয়ায় তিনি আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
হাসনাত আবদুল্লাহর আট দাবি হলো:
১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিতে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন।
২. প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটালাইজ করা।
৩. নিরাপত্তা এবং হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে প্রতিকক্ষে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন।
৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন।
৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত এবং প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনের সংস্কার।
৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারি, মানসিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করা।
৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত, ব্যাবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত না থাকা।
৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচার পরিবেশবান্ধব করা।
এসব দাবির পক্ষে হাসনাত ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সেখানে একটি অভিযোগ বক্স স্থাপন করেছেন। যাদের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং নিয়ে অভিযোগ আছে তারা সেখানে অভিযোগ লিখে জমা দিয়েছেন।