ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে হয়রানি বন্ধে ৮ দফা দাবি নিয়ে ফের অবস্থান শুরু করেছেন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হাসনাত আবদুল্লাহ।
সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অবস্থান নেন ঢাবির এ শিক্ষার্থী। তার দাবিগুলো টানিয়ে রেখেছেন রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের গেটের একাংশে।
৮ দাবি
১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন।
২. প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটালাইজ করা।
৩. নিরাপত্তা এবং হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে প্রতি কক্ষে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন।
৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন।
৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত এবং প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনের সংস্কার।
৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারত্ব, মানসিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতমূলক করা।
৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত না থাকা।
৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচার পরিবেশবান্ধব করা।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট এসব দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেন এ শিক্ষার্থী। ওই সময় তিনি দাবি পূরণে ১০ কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।
সেই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এ শিক্ষার্থী।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বেঁধে দেওয়া ১০ কর্মদিবস শেষ হলেও রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সমস্যা সমাধানে ভিসি স্যার কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমাদের আট দফা দাবির একটি দাবিও পূরণ করেননি কিংবা দাবি পূরণে কোনো ধরনের দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেননি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের অবস্থা যা ছিল, ঠিক তা-ই রয়েছে। তথৈবচ।’
এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মচারীদের কাজে সময়মতো উপস্থিত না হওয়া, লাঞ্চের আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়া, অযথাই ছাত্র হয়রানি করা, অহেতুক দায়িত্বে অবহেলা, রুম নম্বর বিড়ম্বনা, সনাতন পদ্ধতি ও ছাত্র হয়রানি এখনও নিয়মিত ঘটনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যাপ্ত সময়, গঠনমূলক পরামর্শ, সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা দেয়ার পরও আট দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের অসহযোগিতামূলক আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ক্ষুব্ধ। এ জন্য এবার আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমার অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’
অবস্থানে বাধা দেয়ার অভিযোগ করে হাসনাত বলেন, ‘আজকে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে আমাকে বাধা দেয়া হয়েছে। ৯টায় অফিস টাইম থাকলেও ৯টা ৪০ মিনিটে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে অনুপস্থিত। সেই ছবি তুলতে গেলে আমি বাধার সম্মুখীন হই।
‘রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের ছবি তোলার আগে নাকি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ছবি তুলতে হবে। এই অনিয়মের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে।’
হাসনাতের জরিপ কী বলছে
গত মাসের শেষের দিকে দেয়া আলটিমেটাম চলাকালে হাসনাত আবদুল্লাহ ঢাবির প্রশাসনিক ভবনের সেবা সম্পর্কে অনলাইনে জরিপ করেন। সেই জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ৭০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
জরিপের ফল অনুযায়ী, ৮৯.২ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রশাসনিক ভবনের সেবার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ ও অপ্রত্যাশিত। ৬৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতামত হলো প্রশাসনিক ভবনে ঘুষ লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির চর্চা হয়। সর্বোচ্চসংখ্যক হয়রানি হয় ভর্তি, বৃত্তি, মার্কশিট ও ট্রান্সক্রিপ্ট শাখায়।
জরিপ অনুযায়ী, ‘লাঞ্চের পরে আসুন’, ‘এটা এই রুমের কাজ না’ এবং ‘কাগজ এখনও হল থেকে আসেনি’ বাক্যগুলো শুনতে হয়েছে চার শতাধিক শিক্ষার্থীকে।
হাসনাতের জরিপ অনুযায়ী, ৮৬.১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, প্রশাসনিক ভবনের বর্তমান কাজ ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত, বিপরীত বা শূন্য।
ফল অনুযায়ী, চার শতাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সেবাদাতাদের কাছে সেবাগ্রহীতারা নিরুপায় এবং সেবাগ্রহীতাদের সময়ের কোনো মূল্য নেই।
অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সেবার মান অপরিবর্তিত থাকার কারণ হিসেবে কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বচ্ছতার অভাবকে দায়ী করেছেন।
৭২.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রত্যক্ষ আন্দোলনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা উচিত।