‘সম্প্রতি আমি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পায়ে ব্যথা পাই। আমার ক্লাস আটতলায়। আগে নিয়মিত সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করলেও এখন পারি না। ক্লাস টাইমে দীর্ঘ লাইন থাকে। দীর্ঘ এই লাইনের জন্য সহজে লিফট ধরতে পারি না। ফলে প্রায় সময় ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও ঢুকতে দেরি হয়ে যায়।’
কথাগুলো বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফাহমিদা আনিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে লিফট পেতে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন তার মতো অনেকেই।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, লিফটের তুলনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় অপেক্ষা দীর্ঘ হয়। এ কারণে প্রায়ই ক্লাসে যেতে দেরি হয় তাদের। পরীক্ষার কেন্দ্রেও নির্দিষ্ট সময় ঢুকতে পারেন না। শ্রেণিকক্ষ বা পরীক্ষার কেন্দ্র অনেক ওপরে হওয়ায় হেঁটে ওঠাও কষ্টকর।
জবিতে শুধু নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনে আছে লিফট। ভবনটিতে এলিভেটরের জন্য সাতটি জায়গা থাকলেও লিফট আছে চারটি।
এ ৪ লিফটেই প্রতিদিন ওঠানামা করেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জবির একেকটি লিফটে একবারে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ জন উঠতে বা নামতে পারেন। এর মধ্যে ১ নম্বর লিফটটি শুধু শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যে বরাদ্দ হলেও সেটি সাততলা পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। ফলে প্রায় সময় ২, ৩ ও ৪ নম্বর লিফট শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার করতে হয়।
যান্ত্রিক ত্রুটিতে ৪ নম্বর লিফটটি এক মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনে ১৫ বিভাগে ৮ হাজার ৭৮০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এসব বিভাগে প্রায় ১ হাজার শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এ ছাড়াও ভবনটিতে অন্য ভবনের বিভাগগুলোর শিক্ষকদের কক্ষ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেল, গবেষণা পরিচালকের দপ্তর ও পরিকল্পনা দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি দপ্তর রয়েছে ভবনটিতে। এ কারণে লিফটে প্রতিনিয়তই চাপ থাকে।
কী বলছেন শিক্ষার্থীরা
পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র শিহাব হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লিফটের লম্বা লাইনের কারণে আমার প্রতিদিনই পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেরি হয়, কিন্তু আমাকে তো পরে সময় বাড়িয়ে দেয় না।’
এ সমস্যা নিয়ে প্রশাসন উদাসীন বলে অভিযোগ শিহাবের।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ইউছুব ওসমান বলেন, ‘অন্য সময় কষ্ট করে হলেও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যায়, কিন্তু সমস্যা হয় পরীক্ষার সময়। সে সময় লিফট ধরতে না পারলে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে শরীরে ক্লান্তি লাগে। আবার পরীক্ষার সময়ও নষ্ট হয়ে যায়। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগীত বিভাগের এক ছাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাস হয় ১২ তলায়। আমাদের বিভাগে প্রায় সময় পরীক্ষা থাকে। তাই আমাদের শাড়ি পরে আসতে হয়। শাড়ি পরে কোনোভাবেই হেঁটে ওঠা সম্ভব না।
‘আবার দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে যায়। পেছনের একটা লিফট বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। সেটা চালু থাকলেও লাইন কিছুটা কম থাকে। সেটা কেন বন্ধ থাকে, সেটাও জানি না। অন্তত ক্লাস টাইমে চালু রাখা উচিত।’
এদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত সোমবার বিকেলে লিফট ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
ওই সময় শিক্ষার্থীদের ১৫ মিনিটের মতো লিফটে আটকে থাকতে হয়। পরবর্তী সময়ে অপারেটর ও সিকিউরিটি গার্ড এসে তাদের উদ্ধার করেন।
প্রধান প্রকৌশলীর ভাষ্য
সার্বিক বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে আমরা চার নম্বর লিফটটি নতুন লাগিয়েছিলাম। যে কোম্পানির কাছ থেকে আমরা লিফট নিয়েছিলাম, তাদের সঙ্গে আমাদের সার্ভিসিংয়ের চুক্তি ছিল না।
‘এখন সার্ভিসিংয়ের অভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় লিফট সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিফটের সমস্যা সমাধানে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে সার্ভিসিংয়ের জন্য চুক্তি করব। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি লিফটগুলো দেখেও গেছে।
‘আমরা হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কয়টি লিফট একসঙ্গে সার্ভিসিংয়ের ব্যবস্থা করব৷ আমরা দ্রুতই সমস্যাটির সমাধান করতে চেষ্টা করছি।’
হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী আরও জানান, যে লিফটি সাততলা পর্যন্ত যায়, সেটিকে ১৩ তলা পর্যন্ত নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। নতুন আরেকটি লিফট বসানো হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডারও দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে খুব শিগগিরই বসানোর কাজ শুরু হবে।