রং-তুলির আঁচড়ে নিজের সৃজনশীলতাকে উন্মোচন করছে ছোট্ট শিশু জারা। সেই দৌড়ে পিছিয়ে নেই রাহিবও। একমনে ক্যানভাসে তুলির আঁচড় দিয়েই যাচ্ছে। অন্যদিকে মানবদেহের ছোট একটি রেপ্লিকায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন করছে তৃতীয় শ্রেণির আহফানহু।
পাঁচ বছরের মিহিতা নিজের হাতেই স্যান্ডউইচ তৈরি করে সেই খাবার নিজেই গ্রহণ করছে। খানিক পর আবার জলকেলি খেলায় মেতে ওঠা। সব শেষে গল্প বলা।
অর্ধশতাধিক শিশুর দিনব্যাপী অংশগ্রহণে এ যেন আনন্দরাজ্য। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই ৬ ঘণ্টা শিশুরা নিজেদের মতো করে সময় কাটায়।
কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত ‘এ ডে ফুল অফ ফান’ কর্মশালায় শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত এ অংশগ্রহণ।
রাজধানীর প্রগতি সরণির র্যাংগস আরএল স্কয়ারে সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে এ কর্মশালা। ৩ থেকে ১২ বছরের বিভিন্ন স্কুলের ৫০ জন শিক্ষার্থী এ কর্মশালায় অংশ নেয়। ছয়টি সেশন চলে। এগুলো হলো- আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফ্ট, সায়েন্স এক্সপেরিমেন্টস, কুকিং, সিংগিং ড্যান্সিং, স্টোরি টেলিং এবং ওয়াটার প্লে।
নিজেরাই বিজ্ঞানের নানা বিষয় দেখছে শিশুরা। ছবি: নিউজবাংলাকর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী শিশুদের সার্টিফিকেট দেয়া হয়। মূলত ছুটির দিন শুক্রবারে শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকরা যাতে ভালো সময় কাটাতে পারেন, সেটিই লক্ষ্য ছিল এ আয়োজনের।
সকালে পরিবার-পরিজন নিয়ে শিশুরা ভিড় জমাতে থাকে অনুষ্ঠানস্থলে। পরে কয়েকটি দলে তাদের বিভক্ত করা হয়। একেক দল একেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকে।
ঘড়ির কাঁটা যখন ১০টা ছুঁইছুঁই, তখন একদল শিশু ব্যস্ত রং-তুলি দিয়ে নিজের ক্যানভাস চিত্রিত করতে। পদ্মা সেতু, ফুল, গ্রামীণ দৃশ্যসহ নানা রকম ছবি আঁকায় ব্যস্ত যখন শিশুশিল্পীরা, তখন আয়ুষ্মানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘কী করছ?’ ব্যস্ত এই শিশু উত্তরে বলে, ‘আমি কাজ করছি। এখন কথা বলা যাবে না।’
একটু সামনে এগিয়ে দেখা গেল মানবদেহের ছোট একটি রেপ্লিকায় অঙ্গ জুড়ছে তৃতীয় শ্রেণির আহফানহু। মিহিতা তৈরি করছে স্যান্ডউহচ। মাফিনকে নতুন করে ডেকোরেট করতে পেরে অনেকে আনন্দিত।
খানিক পর কৃত্রিম সৃষ্টি করা জলাধারে খেলায় মেতে ওঠে শিশুরা। গানের তালে তালে তারা যেন সমুদ্রস্নানের আনন্দে মেতে ওঠে।
এরপর গল্প বলা। প্রত্যেকের চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ। গান, নাচসহ নানা আয়োজন।
অস্থায়ী সুইমিংপুলে পানি নিয়ে এক শিশুর আনন্দ। ছবি: নিউজবাংলাসর্বশেষে সব অংশগ্রহণকারীর হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হয়। অর্ধশতাধিক শিশুর দিনব্যাপী অংশগ্রহণে বদলে যায় পুরো ভবন।
কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান অভিভাবকরা। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার দাবি জানান তারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিশুদের নিয়ে ইনডোরে না, এরপর আউটডোরে এমন কর্মশালা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হেড অফ স্কুল সিফাত লায়লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমরা অনেকগুলো সেশন পরিচালনা করেছি। অনেকগুলো স্কুলের শিশু এখানে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাবা-মা পুরো সপ্তাহ ব্যস্ত থাকেন। শুক্রবার ছুটির দিনটি শিশুদের সঙ্গে কীভাবে কাটাতে হয়, তা অভিভাবকদের অনেকে বোঝেন না। এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিভাবকরা যেন তাদের কোয়ালিটি টাইম বাচ্চাদের সঙ্গে এনজয় করতে পারেন। যার ফলে শিশুদেরও কিছু লার্নিং হয়।’
শিশুদের নানা ধরনের শেখার সঙ্গে পরিচয় করানো হয় আয়োজনে। ছবি: নিউজবাংলাসিফাত লায়লা বলেন, ‘শিশুরা তাদের সৃজনশীলতা কীভাবে প্রকাশ করতে পারে, এটিকেটস, ম্যানার, টেবিল ম্যানার, একটা টেবিলে বসলে কীভাবে খাওয়া উচিত। নিজের খাবার যেন নিজেই বানিয়ে খেতে পারে। বাসায় যখন একা থাকে– এগুলোর চর্চা হয়েছে। যেমন একটা স্যান্ডউইচ বানিয়ে খেল। কোনো খাবারকে আরও ডেকোরেট করে কীভাবে আকর্ষণীয় করা যায়, তা শিখল। আমাদের শুধু তাদের সুযোগ করে দেয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে সুন্দর সময় কাটাবেন, এমন ভালো জায়গা নেই। বড় খোলা মাঠ এখন নেই। আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছি, যেখানে শিশুরা বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সুন্দর উপায়ে শিখবে। পেশাদারদের দিয়ে আমরা সেশনগুলো চালিয়েছি।’
অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিশাকে দেখা যায় অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কী যেন পরীক্ষায় মেতেছে। কুকিং সেশনে অংশ নেয়া মিহিতা নিউজবাংলাকে বলে, ‘বেশ ভালো লাগছে। এর আগে বাসায় স্যান্ডউইচ বানিয়েছিলাম।’
কর্মশালায় অংশ নেয়া কাজী মাহরুস আবদুল্লাহর বাবা ব্যাংকার কাজী ফজলুর রহমান বলেন, ‘খুবই ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশন ছিল। শিশুদের জন্য এ ধরনের ইভেন্ট হয় না। আমাদের বাচ্চারা যেভাবে বন্দি, চারদেয়াল থেকে তাদের বের হওয়ার সুযোগ নেই।’
মাহরুস আবদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমার ভালো লেগেছে। প্রথম আর্টস সেশন, সায়েন্স এক্সপেরিমেন্টসহ অনেক কিছু করেছি।’