বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে ভুগছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নেই সুপেয় পানির তেমন ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে থাকলেও এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া এবং কেন্দ্রীয় মসজিদ ছাড়া আর কোথাও পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি সেমিনার রুমে বা কমনরুমে পানির ফিল্টার বসানো হলেও তা গরমে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। আবার অনেক বিভাগে এখনও বসানো হয়নি ফিল্টার।
ক্যাম্পাসের আশেপাশে থাকা শিক্ষার্থীরাও বিশুদ্ধ পানির জন্য ক্যাম্পাসের ফিল্টার পানির উপর নির্ভরশীল। বিকেলে এবং সন্ধ্যায় পানি সংগ্রহের জন্য ক্যাফেটেরিয়া এবং কেন্দ্রীয় মসজিদে জমে ভিড়। ক্যাফেটেরিয়া রাত সাড়ে ৮টায় বন্ধ হওয়ায় পানি সংগ্রহের জন্য শিক্ষার্থীরা একমাত্র কেন্দ্রীয় মসজিদে সামনে ভিড় জমান।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে কিন্তু ঠিকভাবে পানির ব্যবস্থাটা পর্যন্ত রাখা হয়নি। পানি নিতে ক্যাফেটেরিয়ায় লাইন ধরতে হয়।
এসব ভোগান্তির স্থায়ী সমাধান করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকবার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বিশুদ্ধ পানি পায় না। পানি নেয়ার জন্য দীর্ঘ সিরিয়াল দিতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি মাত্র ক্যাফেটেরিয়া, সেখানে এমনিতেই সবসময় প্রচুর ভিড় থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু সময় ক্যাফেটেরিয়া বন্ধও থাকে। সেখানে একটা পানির ফিল্টার আছে। আর মসজিদে আছে একটি। সেখান থেকে ফিল্টার পানি নেয়ার সময় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়।’
পুরান ঢাকায় মেসে থেকে পড়াশোনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত পাল। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ‘পুরান ঢাকার কয়েকটি সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। তাই ক্যাম্পাস থেকেই পানি নিয়ে যাই। রাতে আবার ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ হয়ে যায়, তখন মসজিদ থেকে পানি আনতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে দিতে পারে আমাদের জন্য।’
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রাইছা বিনতে জেরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পানি জন্য প্রতিদিন আসতে হয়। মসজিদের ওজুখানা থেকে পানি সংগ্রহ অনেকটা বিবৃতিকর। এছাড়া পানি সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। ক্যাম্পাসে মুক্তভাবে কয়েকটা ফিল্টার স্থাপন হলে সহজে আমরা পানি সংগ্রহ করতে পারতাম।’
এদিকে কয়েকটি বিভাগ ছাড়া বেশিরভাগ বিভাগেই শিক্ষার্থীদের জন্য নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরাব বলেন, ‘বিভাগে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। এখন আমাদের ক্লাস হয় ১০ তলায়। দেখা যাচ্ছে পানি খাওয়ার জন্য দশতলার নিচে নামতে হয় কিংবা অন্য বিভাগে যেতে হয়।’
এ ব্যাপারে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বেসিন আছে এবং সমাজবিজ্ঞান ভবন-১ এর সঙ্গে যে বেসিন আছে ওখান থেকে তারা পানি খেতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানির কল লাগালে তো ভেঙে চুরে খুলে নিয়ে যায়। এখন এমন জায়গায় কল লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে যেখানে মানুষজনের আনাগোনা রয়েছে, নিরাপদে রাখা যাবে। আমরা ব্যবস্থা করছি।’