জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন দপ্তরের ‘লাঞ্চ টাইম’। বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তরগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুপুরের খাবারের জন্য সময় নির্দিষ্ট না থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে, দুপুরের খাবার ও নামাজের বিরতির জন্য ৪৫ মিনিট সময় নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কিন্তু লাঞ্চ টাইম নির্দিষ্ট করে বলা নেই। আর তাতেই বাধে বিপত্তি। শিক্ষার্থীরা কোনো কাজের জন্য কোনো দপ্তর বা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে গেলে শুনতে হয় ‘লাঞ্চের পরে আসুন’। আবার কোনো কোনো দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘৩টার পরে আসুন।’
সরেজমিনে জানা যায়, রেজিস্ট্রার ভবনে নির্ধারিত কোনো লাঞ্চ টাইম নেই। একেক কক্ষে একেক সময়কে ‘লাঞ্চ টাইম’ বানিয়ে নেয়া হয়।
এ বিষয়ে এক কর্মচারী বলেন, সাধারণত লাঞ্চের সময় ৪৫ মিনিট। কিন্তু কয়টা থেকে তা শুরু হবে এটা নির্ধারণ করা নেই। তাই যখন যার কাজের চাপ থাকে না তিনি ওই সময় লাঞ্চ করেন।
এদিকে দুপুরের খাবারের জন্য ৪৫ মিনিট নির্ধারণ করা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে লাঞ্চ টাইমের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এক ঘণ্টা (দুপুর ১টা থেকে ২টা)।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বেলা আড়াইটায় গিয়েও দেখা যায় কর্মচারীরা দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। এ সময়ে বিভিন্ন কাজে শিক্ষার্থীরা গেলে তাদের লাঞ্চের পর আসতে বলা হয়।
একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি শাখায়ও। দুপুর ১২টা বাজতেই শুরু হয়ে যায় লাঞ্চ টাইম। কখন শেষ হবে- এমন প্রশ্নে উত্তর মেলে, বিকেল ৩টা। কিন্তু শুরুটা ঘড়ির কাঁটা ধরে হলেও শেষ আর হতে চায় না।
পরিবর্তন নেই শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর আইটি সেলেরও। আইডি সংক্রান্ত সমস্যা কিংবা ফি প্রদান করতে গেলেও দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেই। এ অবস্থায় বার বার একই দপ্তরে আসা-যাওয়া করতে হয় শিক্ষার্থীদের। সময়মতো কাজ না হওয়ায় তাদেরকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নানামুখী ভোগান্তির কথা। কোনো দপ্তরে দুপুর ১২টার সময় গেলেও লাঞ্চের বাহানা দিয়ে বলা হয়, ‘পরে আসুন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন অপি বলেন, ‘তিন সপ্তাহ ঘুরেও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির কার্ড পাচ্ছি না। সকালে গেলে পাওয়া যায় না, দুপুরে গেলে বলা হয় লাঞ্চের পর যেতে। আর ৩টার পর কোনো কাজই তারা হাতে নেন না।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে করা হোক। এতে করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে, সময়ও বাঁচবে।
স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজ অনলাইনে করলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হতো। তাহলে আধুনিকায়নের এ যুগে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করে কষ্ট করতে হতো না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রার ভবনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দপ্তরের কাজগুলো ডিজিটালি হলে ভোগান্তি কমবে। তবে এত দ্রুত সব কাজ ডিজিটালের আওদায় আনা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অবশ্য করোনার সময়ে বিভিন্ন কাজ ই-ফাইলের মাধ্যমে অনলাইনে করেছি আমরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘লাঞ্চের জন্য সময় তো নির্ধারণ করে দেয়া আছে। যারা নিয়ম ভঙ্গ করেছে তাদের জিজ্ঞেস করো কেন মানে না নিয়ম। সবার তো নিয়ম মেনে চলা উচিত।’
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে করার চেষ্টা চলছে। ডিজিটাল মাধ্যমে কাজগুলো করা হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।’