পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) জালিয়াতি করে ডক্টরেট ডিগ্রি নেয়ার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক সহযোগী অধ্যাপককে পদাবনতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে তার এই ডিগ্রিও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় মঙ্গলবার রাতে এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন।
শাস্তির মুখে পড়া আবুল কালাম লুৎফুল কবীর ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগে চাকরি করছেন।
সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, পিএইচডি থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিন্ডিকেট সভায় লুৎফুল কবীরের ডিগ্রি বাতিল এবং পদাবনতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা যায়, পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) ৯৮ শতাংশই নকলের অভিযোগ উঠেছিল আবুল কালাম লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে। তার এই অভিসন্দর্ভের নাম ছিল ‘টিউবার কিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দিয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথ’।
২০১৪ সালের দিকে তিনি এই নিবন্ধের কাজ শুরু করেন। তার গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ, আর সহতত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।
সিন্ডিকেটের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সাধারণত পিএইচডি শেষ করতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। কিন্তু লুৎফুল কবীর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ করে ২০১৫ সালে সহতত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের স্বাক্ষর ছাড়াই ডিগ্রির জন্য তা জমা দেন।
থিসিসে সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সহতত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ফারুকের স্বাক্ষর নিয়ে থিসিসটি জমা দওয়া হলে ২০১৫ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে তা অনুমোদিত হয়।
পরে জোনাস নিলসন নামের সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে একটি চিঠি দেন। সেখানে তার গবেষণা থেকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনা হয় লুৎফুল কবিরের বিরুদ্ধে।
ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিন্ডিকেট সভায় ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে কমিটি করে দেয় সিন্ডিকেট। ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর শাস্তি দিতে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া শাস্তিই অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।